1. live@www.chitrarpar.com : news online : news online
  2. info@www.chitrarpar.com : চিত্রারপাড় :
শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০১:৫২ অপরাহ্ন

অগ্নিঝুঁকিতে যশোরের ৭৫৮ প্রতিষ্ঠান, ৫ ভবনে অভিযান

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪
  • ৪৬ বার পড়া হয়েছে

অগ্নিঝুঁকিতে থাকা যশোরের ৭৫৮ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছে প্রশাসন। দীর্ঘদিন সতর্ক করে নোটিশ দেয়ার পরও অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা নিশ্চিত না করায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে জেলা ফায়ার সার্ভিস অভিযান শুরু করেছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহির দায়ান আমিনের নেতৃত্বে শহরের দুটি প্রতিষ্ঠানকে মৌখিকভাবে সতর্ক, দুটি প্রতিষ্ঠানের সামনে ঝুঁকিপূর্ণ প্যানা টাঙানো এবং একটি দোকান থেকে জরিমানা আদায় করা হয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক দেওয়ান সোহেল রানা, ওয়ার হাউস ইন্সপেক্টর লুৎফর রহমান খান ও মোদাব্বির হোসাইন এবং জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে এএসআই জাহিদুল ইসলামসহ পুলিশের সদস্যরা।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স যশোরের উপসহকারী পরিচালক দেওয়ান সোহেল রানা জানান, অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থা নিশ্চিত করেনি যশোরের এমন ৭৫৮ প্রতিষ্ঠানকে ইতোপূর্বে নোটিশ দেয়া হয়েছে। নোটিশ দেয়া প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৬৬টি বাজার মালিক সমিতি, মার্কেট, সুপার মার্কেট ও শপিং মল রয়েছে ৮৭টি, হাসপাতালসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ৫০৫টি, বহুতল ভবন ৪৫টি এবং হোটেল রয়েছে ৫৫টি। কিন্তু এস প্রতিষ্ঠানের মালিকরা নির্দেশ মানেনি। এ জন্য অভিযান শুরু করা হয়েছে।

জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অফিসের পক্ষ থেকে শহরের দুইটি ভবনে এ ধরনের ব্যানার টাঙানো হয়েছে। ভবন মালিক ও সাধারণ জনগণকে সতর্ক করতে ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে ব্যানার টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে। ব্যানারে লেখা রয়েছে, ‘ভবনটি অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ’। অগ্নি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করে ব্যানার দেয়া ভবনগুলো হলো, চৌরাস্তার ওর্কিড সেন্টার ও বস্তাপট্টি মোড়স্থ একসেনসিউর ডেভেলপার লিঃ এর একসেনসিউর গাজী পূর্বাচল টাওয়ারটি। এছাড়াও শহরের এইচএমএম রোডের ঝিলিক নামের একটি কাপড়ের দোকানকে ১হাজার টাকা জরিমানাসহ যশোর ক্লথ স্টোর ও লিবার্টি গ্যালারিকে সতর্ক করা হয়। এসব মার্কেট ও স্থাপনাসমূহে বারবার তাগিদ প্রদান করা সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ নিরাপত্তা বাস্তবায়নে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি। ভবিষ্যতে এসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করারও পরিকল্পনা রয়েছে ফায়ার সার্ভিসের।

জানতে চাইলে যশোর ক্লথ স্টোর ও ঝিলিকের সত্ত্বাধিকারী আযহারুল ইসলাম জানান, ঝিলিক নামে প্রতিষ্ঠানটি আন্ডার গ্রাউন্ডে হওয়ায় তাকে ১হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তিনি ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, এইচএমএম রোডের একটি ভবনেরও কি পার্কিং আছে? যাদের আছে তারা আন্ডারগ্রাউন্ড করে ব্যবসা করছে। না হলে গোডাউন করে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। অথচ শুধু তাকে জরিমানা করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৩ মার্চ যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কমলেশ মজুমদার স্বাক্ষরিত এক নোটিশে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। নোটিশে উল্লেখ করা হয়, অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়াতে আট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিধিমোতাবেক অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি (ড্রাই পাউডার ফায়ার এক্সটিংগুইসার ও কার্বন-ডাই অক্সাইড ফায়ার এক্সটিংগুইসার) স্থাপনে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছিল। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এরইমধ্যে যশোর পৌর এলাকার হোটেল সিটি প্লাজা, হাসান ইন্টারন্যাশনাল, কাপুড়িয়াপট্টির হোটেল নয়ন, হোটেল চৌধুরী, হোটেল ওরিয়ন ইন্টারন্যাশনাল, রেলবাজারের হোটেল শাহানাজসহ শতাধিক আবাসিক-বাণিজ্যিক ভবন মালিক, বিপণী বিতান মালিক সমিতি, বাজার মালিক সমিতি এবং হোটেল ও রেস্তোরাঁসহ বহুতল ভবন মালিককে নোটিশ পাঠানো হয়েছে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স যশোরের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশিদ বলেন, যশোরের বড়বাজার, কালেক্টরেট মার্কেটসহ একাধিক মার্কেট অগ্নিঝুঁকিতে। অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা এড়াতে হাতের কাছে ফায়ার এক্সটিংগুইসার রাখতে ব্যাপক সচেতনতা ছাড়া এমন দুর্ঘটনা মোকাবেলা কঠিন। শুধু ফায়ার সার্ভিস এই সংকট মোকাবেলা করতে পারবে না। এর জন্য সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। সচেতনতা বৃদ্ধিতে স্থানীয় প্রশাসন, পৌরসভাসহ সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসতে হবে।

এ বিষয়ে যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক মো. ছোলজার রহমান জানান, যশোর ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা রয়েছে চারতলা পর্যন্ত আগুন নেভানোর। কিন্তু শহরে ৮-১৪ তলা ভবন নির্মাণ হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা জানান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, বাজার ও ঘনবসতি এলাকায় বেশি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আবার কিছু বহুতল ভবনেও আগুন লেগেছে। এসব বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণের সক্ষমতা নেই ফায়ার সার্ভিস অফিসের। কেননা বহুতল ভবনে অগ্নিনির্বাপণে যে টার্ন টেবল লেডার (টিটিএল) গাড়ি প্রয়োজন, সেটি তাদের নেই। একই সঙ্গে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। রয়েছে পানিস্বল্পতাও। কারণ গত তিন বছরে জেলায় শতাধিক পুকুর বা জলাশয় ভরাট হয়ে গেছে।

যশোর পৌরসভার নগর পরিকল্পনাবিদ সুলতানা সাজিয়া জানান, ছয়তলা পর্যন্ত ভবন অনুমোদন দিয়ে থাকে পৌরসভা। সেখানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

এদিকে গত চার বছরে যশোরে ১ হাজার ১১২টি অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে। ক্ষতি হয়েছে ১৩ কোটি ২৩ লাখ ৯৯ হাজার ৪৮৭ টাকা। ঢাকার অগ্নিকা-ে ৪৬ জন মারা যাওয়ার পর যশোরে হোটেল-রেস্তোরাঁসহ ৭৫৮টি আবাসিক ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিককে নোটিশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্রপাতি স্থাপন করে হালনাগাদ তথ্য ১০ কার্যদিবসের মধ্যে জমা দিতে বলা হয়েছে। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

যশোর ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল ২৬১টি। যার আর্থিক ক্ষতি ছিল ২ কোটি ৬৯ লাখ ৭১ হাজার ৬৮৭ টাকা। ২০২১ সালে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল ২৪৬টি। আর্থিক ক্ষতি ছিল ৫ কোটি ৭৬ লাখ ৩১ হাজার ৮০০ টাকা। ২০২২ সালে যশোর জেলায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছিল ৩২২টি। যাতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল ২ কোটি ১১ হাজার টাকা। সর্বশেষ ২০২৩ সালে ২৮৩টি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। যাতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছিল ২ কোটি ৭৭ লাখ ৮৫ হাজার টাকা।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩
১৪১৫১৬১৭১৮১৯২০
২১২২২৩২৪২৫২৬২৭
২৮২৯৩০৩১  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট