দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশ থেকে চারদিন আগে বিদায় নিলেও লঘু চাপের কারণে যশোরে প্রায় তিন ঘণ্টা টানা বৃষ্টি হয়েছে। অসময়ের এই বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে শীতকালীন সবজি ক্ষেত। ভেসে গেছে মাছের ঘের। বিভিন্ন স্থানে ডুবে গেছে ধান ক্ষেত। আর পুরনো দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন যশোর শহরবাসী। শহরের রাস্তা ড্রেন ছাপিয়ে বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়ে অনেক এলাকার বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানিয়েছেন, শুক্রবার দুপুর ১২টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত যশোরে ১১৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।
এদিকে, সকাল থেকেই আকাশে সূর্য ও মেঘের লুকোচুরি খেলা চলছিল। সকাল ১০টা পর্যন্ত রোদ থাকলেও ১১টা নাগাদ মেঘের আনাগোনা শুরু হয়। এরপর দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ শুরু হয় একটানা ঝুম বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টি। যা অঝোর ধারায় চলে দুপুর সাড়ে তিনটা পর্যন্ত। ভারি এ বৃষ্টিপাতে নিমিষেই তলিয়ে যায় শহরের নিম্নাঞ্চল। সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। এতে দুর্ভোগে পড়েন বসবাসকারীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, শহরের পালবাড়ি, আরবপুর, পুলিশ লাইন টালিখোলা, পুরাতন কসবা ও ঘোপ ধানপট্টি, পাইপপট্টি, রেলরোড, টিবি ক্লিনিক রোড, ষষ্ঠীতলাপাড়া, খড়কী, বেজপাড়া মেইন রোড, কারবালা সড়ক, বকচর হুশতলা সড়ক, পিয়ারী মোহন রোড, বুনোপাড়া এলাকাসহ বিভিন্ন সড়ক ও পাড়া মহল্লায় বৃষ্টির পানি জমে যায়। বৃষ্টির পর সড়ক থেকে পানি সরে যেতে সময় লাগে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা। সড়ক তলিয়ে যাওয়ায় নায়েমের প্রশিক্ষক, প্রশিক্ষণার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ ওই এলাকার সাধারণ মানুষজনকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সেইসঙ্গে ড্রেনের ময়লা পানিতে মিশে দুর্ভোগ বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ।
শহরের রেলরোড এলাকার বাসিন্দা মুস্তাফিজুর রহমান জানান, কিছুদিন আগের বৃষ্টিতে শহরের বেশকিছু এলাকা তলিয়ে গেলেও তাদের এলাকায় পানি জমেনা। তবে আজ (গতকাল) মাত্র তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে তাদের এলাকায় হাঁটু সমান পানি জমে গেছে। এর আগে কখনো এমন পানি জমা তিনি দেখেননি।
রিপন হোসেন নামে ভোলা ট্যাংক রোড এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ সমস্যা। আগে বৃষ্টির পানি দ্রুত অপসারণের জন্য যে পয়েন্ট ছিল, সেটি যেকোনো কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে এমন অসহ্য দুর্ভোগ তৈরি হয়। বৃষ্টি হলেই দুই থেকে আড়াই ঘণ্টার জন্য আটকে যেতে হচ্ছে। এ সমস্যা সমাধানে কেউ কোনো কাজ করতে পারল না। বর্ষাকালে শিশুদের নিয়ে আমরা খুব কষ্ট করি। স্কুল-কলেজ ছুটির পর ময়লা পানি মাড়িয়ে বাসায় ফিরতে হয়। এতে পায়ে ও শরীরে চুলকানিসহ বিভিন্ন রোগ দেখা যায়। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হওয়া দরকার।
শহরের পুরাতন কসবা মসিউর রহমান সড়কের বাসিন্দা মেরুনা জেসমিন বলেন, তিন ঘণ্টার বৃষ্টিতে আমার ঘরে ছয় ইঞ্চির মতো পানি জমেছে। বাড়ির লোকজন মিলে এখন পানি বাইরে বের করতে হচ্ছে।
শহরের বেজপাড়া চোপদারপাড়া এলাকার বাসিন্দা জিল্লুর রহমান জানান, তাদের এলাকাসহ ষষ্টীতলা, টিবি ক্লিনিক এলাকা, চার খাম্বা মোড়, ভোলা ট্যাংক রোড, খড়কী, শংকরপুর এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া শহরের স্টেডিয়ামপাড়া, মিশনপাড়া, উপশহর, চাঁচড়া, কারবালা, এমএম কলেজ এলাকা, নাজিরশংকরপুর, বকচর, আবরপুরসহ বেশ কয়েকটি এলাকাও বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে।
যশোর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী কামাল আহমেদ বলেন, জলাবদ্ধতার অনেকাংশ হ্রাস পেয়েছে। আমরা ড্রেনের পানি নিষ্কাশনে যে প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সেগুলো অপসারণ করছি। বর্তমানে পৌর প্রশাসকের উপস্থিতিতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় এস্কেভেটর দিয়ে পানি বের হওয়ার প্রতিবন্ধকতা দূরীকরণে কাজ চলছে।
অন্যদিকে, যশোর সদরের আব্দুলপুর গ্রামের সবজি চাষি আমিন উদ্দিন বলেন, আমাদের এলাকায় এখন ঝাল, বেগুন, টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি ইত্যাদির চারা লাগানো হচ্ছে। আমার এই সবের বীজতলা রয়েছে। এই বৃষ্টিতে যেসব বীজের চারা গজায়নি, সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে। এ ছাড়া গত দুই তিন যারা চারা রোপণ করেছেন, তাদের চারাও নষ্ট হবে।
তিনি বলেন, এই এলাকা অপেক্ষাকৃত উঁচু হলেও আজকের বৃষ্টিতে অনেক জমি তলিয়ে গেছে। আমার কয়েকটি বীজতলা পানির নিচে। কৃষকের বেশ ক্ষতি হয়ে গেলো।
যোগাযোগ করা হলে যশোর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক ড. সুশান্ত কুমার তরফদার বলেন, শীতকালীন আগাম সবজি চাষিদের জন্য এটি একটি দুঃসংবাদ। এবার বৃষ্টিতে দেশে ফসলের বেশ ক্ষতি হয়েছে। কৃষকরা আশায় বুক বেঁধে আগাম সবজি চাষে বেশ আগ্রহী হয়েছিলেন। আজকের বৃষ্টিতে তাদের বড় ক্ষতি হচ্ছে। ফসলের বিলম্ব হবে। এ ছাড়া বীজতলা বা নতুন চারা রোপণে কী পরিমাণ ক্ষতি হয়েছে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, লঘুচাপের বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে। এর প্রভাবে শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, খুলনা ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হয়েছে।
শনিবার (১৯ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় রংপুর, ঢাকা, ময়মনসিংহ, খুলনা ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
রবিবার (২০ অক্টোবর) সকাল ৯টা থেকে পরের ২৪ ঘণ্টায় অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারা দেশের আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। এ সময় সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে। বর্ধিত পাঁচ দিনের আবহাওয়ার অবস্থা জানাতে গিয়ে বলা হয়, এসময় মধ্য বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে।