যশোর জেনারেল হাসপাতালে নানা তুঘলকি কারবার চললেও দেখেও না দেখার ভান করে চলছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তার। নিয়মিত মাসোহারাতেই তুষ্ঠ থাকছেন তারা। এই সুযোগেই প্রায় ২৭ বছরের অধিক সময় ধরে যশোর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে চাকরি করে যাওয়া ইমরান টফি হয়েছেন আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। হয়েছেন আলিশান বাড়ি ও রেস্টুরেন্টের মালিক। যেন তাকে ধরা ছোঁয়ার কেউ নেই। বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠলেও কিছুদিনের মধ্যেই অদৃশ্য হাতের ছোঁয়ায় স্বমূর্তিতে ফিরে আসেন বারবার। তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়মের অভিযোগ থাকলেও ভয়ে মুখ খুলতে চাননা তার সহকর্মীসহ উর্দ্ধতন কর্মকর্তারাও। কিছুদিন আগেও ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগের দোসর থাকলেও ৫ আগষ্টের পর থেকে বনে গেছেন বিএনপির চরম শুভাকাঙ্খি। কথায় কথায় নিজেকে বিএনপির বড় কর্মী ও যশোর বিএনপির বড় নেতাকর্মীদের আস্থাভাজন হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকেন।
নাম প্রকাশ না করার সূত্রে একাধিক হাসপাতাল কর্মী জানিয়েছেন, জমাদ্দার ইমরান হোসেন টফির মুল আয়ের অংশ আশে হাসপাতালের স্বেচ্ছাসেবক কর্মী, রোগি ভাগিয়ে প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি ও বিভিন্ন ধরনের টেষ্ট বানিজ্য, তার নিজস্ব কয়েকজন আস্থাভাজন কর্মীদের দিয়ে হাসপাতালের ঔষধ চুরি এবং রোগিদের বেঁচে যাওয়া ঔষধ বাইরে বিক্রি করা থেকে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা, গেছে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে ৪৪ জন স্বেচ্ছাসেবী কাজের সুবিধার্তে নিয়োগ দেওয়া হলেও বর্তমানে কাজ করছেন প্রায় ২০ জন। এছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক হিসাবে আছে আরো প্রায় ৯৫ জন। এসকল স্বেচ্ছাসেবক কর্মীদের নানা ছল চাতুরির মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়ার্ডসহ হাসপাতালে মৌখিক চুক্তিতে নিয়োগ দিয়েছেন ইমরান টফি।
এই নিয়োগ বাণিজ্যে তাকে অনৈতিক সহযোগিতা করছেন হাসপাতালের প্রভাবশালি কয়েকজন ডাক্তারসহ কর্মকর্তারা। কর্মকর্তাদের মধ্যে যশোর সদর হাসপাতালের সাবেক আরএমও ডা. সামাদ ও তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদের নাম মুখে মুখে। যদিও যশোরের শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. সামাদ চৌগাছায় পোষ্টিং থাকলেও ডেপুটেশনে ডিউটি করছেন যশোরে। এই প্রভাবশালী দুই জনসহ অন্যান্যদেরকে খুশি রেখেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন জমাদ্দার ইমরান টফি।
হাসপাতালের জমাদ্দার পোষ্টটিতে কর্মরত থাকার কারণে দিনের ২৪ ঘন্টা হাসপাতাল এরিয়াতে থাকার কথা থাকলে জমাদ্দার ইমরান টফি থাকেন মাত্র ৫/৬ ঘন্টা। হাসপাতালের কোয়ার্টারে থাকার ব্যবস্থা থাকলেও ইমরান টফি থাকছেন তার নিজের বাড়িতে। যা শহরের বাইরে ইছালি এলাকায় অবস্থিত। সাধারণত সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত তাকে হাসপাতাল এরিয়াতে পাওয়া গেলেও তার পর তিনি চলে যান নিজের মালিকাধিন একটি রেস্টুরেন্টে।
এ ব্যাপারে যশোর জেনারেল হাসপাতালের ওয়ার্ড মাষ্টার জালাল তাকে কয়েকবার চাকুরির শর্তের কথা মনে করিয়ে দিলেও তিনি উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জোরে এসব কথা বা কাজের কোন প্রকার তোয়াক্কা করেন না।
হাসপাতালের স্পেশাল এই কর্মচারি ইমরান টফির ব্যাপারে কয়েকজন হাসপাতাল কর্মীর সাথে কথা বলে জানা যায়, কিছুদিন পূর্বে ৭৮পিস ইনজেকশন চুরির কারণে ইমরান টফির খুব কাছের কর্মী কোহিনুর ও পলি বরখাস্ত হলেও বেঁচে যান টফি। তারপর কিছুদিন চুপচাপ থাকলেও জমাদ্দার ইমরান টফি নতুন উদ্দ্যমে শুরু করেন তার চাঁদাবাজিসহ নানা অনিয়মের বাণিজ্য। তার একাজে একান্তভাবে সহযোগিতা করছেন স্বেচ্ছাসেবক সালমা, পপি, নারগিছ, আকলিমা, ছোনিয়া, মিতু, সাথি, জ্যোতি, রোজি, শাহানাজ, মিতা, নাজমুল, দিলিপ, জনি, সবুজ নামক অবৈধ কার্ডধারি কর্মীরা।
কথা বলে জানা গেছে, এসকল কর্মীদের কাছ থেকে হাসপাতালের কার্ড বাবদ ইমরান টফি ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা গ্রহণ করছেন। উপরন্ত এই সকল কর্মীদের প্রতিমাসে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকা তাকে প্রদান করতে হয় উপর মহলকে তুষ্ঠ করতে। এর মধ্যে জ্যোতি তাকে প্রতি মাসে কমপক্ষে ১০ হাজার টাকা প্রদান করে থাকেন। টাকা দিতে না পারলেই চলে কাজ থেকে বের করে দেওয়ার হুমকি-ধামকি।
এর মধ্যে ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে তিনি নাকি এই কর্মীদের মধ্যে দুইজনকে কলগার্ল হিসাবে পাঠিয়ে থাকেন তার মালিকাধিন যশোরের ফতেপুর এলাকায় অবস্থিত রেস্টুরেন্টে। এই দুইজন ছাড়াও আরো কয়েকজনকে তিনি একাজে ব্যবহার করে থাকেন বলেও অভিযোগ আছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, হাসপাতালে চুক্তিভিত্তিক ও চুক্তির বাইরে যে সকল কর্মচারি কাজ করছে তাদের বেশিরভাগ কর্মীই যশোরে বিভিন্ন ক্লিনিকে দ্বিতীয় সিফটের দালাল হিসাবে কর্মরত আছে। তারা যশোর জেনারেল হাসপাতালে আসা অসহায় রোগিদের নানা ভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে অন্য ক্লিনিকে ভাগিয়ে নিয়ে যায় এবং ঐসকল ক্লিনিক থেকে নানা অংকের টাকা আত্মসাত করে থাকেন। কিন্তু এসকল কর্মীদের অন্যায় কাজ জানার পরও ইমরান টফি তাদের কাছ থেকে রোগি প্রতি নানা অংকের উৎকোট গ্রহণ করে থাকে। ঠিকমতো টাকা না দিলে হাসপাতালে স্বেচ্ছাশ্রমরত শ্রমিকদের ডিউটি বন্ধ করে দেন তিনি। ফলে তারও নিয়মিত ভাবে এই টাকার ভাগ দিতে বাধ্য হয়ে পড়েন। তিনি নাকি এসকল টাকা হাসপাতালের ডিউটিরত ডাক্তার ও কর্মকর্তাদের নাস্তার কাজে ব্যবহার করে থাকেন।
এসকল অভিযোগে ব্যাপারে ইমরান টপির সাথে কথা বললে তিনি অনেক অভিযোগের কথা স্বীকার করে জানান, অনেকদিন যাবত (প্রায় ৩০ বছর) সদর হাসপাতালে সুনামের সাথে চাকরি করে যাচ্ছি। আমার বিপক্ষের লোকেরা আমার বিরুদ্ধে নানা কুৎসা রটালেও এখন পর্যন্ত কিছুই করতে পারেনি। আর অল্প কিছুদিন আছে চাকরির এখন আর বদলি হওয়ার ইচ্ছা নেই। স্যারদের সাথে কথা বলে চাকরির শেষ পর্যন্ত এখানেই থাকবো।
জমাদ্দার ইমরান টিপুর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায় ডা. হারুন অর রশিদের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, ইমরান টফি অনেক বছর যশোরের ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আছেন। তবে তার বদলির ব্যাপারে কাজ চলছে।
ইমরান টফির অন্য অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একটু ব্যস্ত আছি, আপনি আমার অফিসে আসুন কথা বলবো।