বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ‘আমরা যদি দেশের জন্যে কাজ করি, আপনাদের কাছে চারটি জিনিস প্রত্যাশা করি। প্রথমত আমরা আপনাদের ভালোবাসার কাঙাল, একটু ভালোবাসা উপহার দেন; ভালোবাসার সঙ্গে সঙ্গে একটু সমর্থন ও সহযোগিতা চাই; এর পাশাপাশি জাতীয় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় আপনাদের যেন পাশে পাই আর এই জাতিকে বদলে ফেলার জন্যে আপনাদের অন্তরে যেন জায়গা পাই—এই চারটি জিনিস দেশবাসী যদি আমাদের উপহার দেয়, তাহলে আমরা চিরকাল কৃতজ্ঞ থাকবো। ক্ষমতায় যাওয়ার উদ্দেশ্য আমাদের নয়, দেশে একটা সুশাসন কায়েম করতে চাই।’
শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে যশোর শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহে জেলা জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন। যশোর জেলা উন্নয়ন বঞ্চনার চিত্র তুলে ধরে জামায়াতের আমির বলেন, পুরাতন জেলা হিসেবে যশোরের উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। এই শহরকে কেন্দ্র করে প্রাণকেন্দ্র গড়ে তোলা দরকার। পার্ক নেই, মাঠ নেই, জলাধার নেই। উন্নয়নের কথা বলে ক্ষমতায় যাওয়ার আগে মানুষের পা ছুঁয়ে নেয়, ক্ষমতায় গেলে তারা ভুলে যায়। ভাবে পাঁচ বছর পর আবার পা ছুঁয়ে নিলে হয়ে যাবে। মাঝখানে তারা মানুষকে মনে রাখে না।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ও তার দোসরা ডাকাতি করে ব্যাংকগুলোকে ফোকলা করে দিয়েছে। ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের পুঁজি দিতে পারছে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার অর্থনীতিকে সচলে চেষ্টা করছে। আমরা চাই অর্থনীতি আরও গতিশীল হোক। বাজারে সিন্ডিকেট ভাঙতে পারেনি। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রয়েছে। বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার আরও উদ্যোগী হোক।
দলের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, একদল চাঁদাবাজি করে চলে গেছে। আরেক দল আসুক, আমরা তা চাই না। দেশে কি চাঁদাবাজির হাতবদল হয়েছে। এজন্য তো এতো মানুষ শহীদ হননি। আমরা যেন শহীদের রক্তের সঙ্গে বেঈমানি না করি। এসব ঘৃণিত কাজ করলে শহীদদের সঙ্গে বেঈমানি হবে। আপনারা এই ঘৃণিত কাজ করবেন না।
তিনি আরও বলেন, এদেশে সংখ্যালঘুদের অধিকার কেড়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। তারাই সবচেয়ে বেশি নির্যাতন করেছে। ২০১৩ সালে জাতিসংঘে চিঠি লিখে নিরপেক্ষ তদন্ত দাবি করেছিলাম। এখনও বলছি তদন্ত করুন। দোষী প্রমাণিত হলে বিচার দাবি করছি।
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে জামায়াতের আমির বলেন, ‘এই সংগঠন (জামায়াতে ইসলামী) বাদ দিয়ে একটি দুর্নীতিমুক্ত দেশ গড়ার স্বপ্ন আর কাদের নিয়ে দেখবে। চাঁদাবাজমুক্ত দেশ, দুঃশাসনমুক্ত দেশ হবে—মানুষ আপনাদের দিকে চেয়ে আছে। সে কারণে আমাদের এগিয়ে আসতে হবে; আরও কোরবানির জন্যে তৈরি হতে হবে।’
সকাল থেকেই দলের নেতাকর্মীরা শহরের কেন্দ্রীয় ঈদগাহ, আশপাশের সড়ক এবং পাশের ঐতিহাসিক টাউন হল মাঠে অবস্থান নেয়। কর্মী সম্মেলন রূপ নেয় জনসভায়। বেলা ১১টার দিকে প্রধান অতিথি মঞ্চে আসেন।
তিনি ওহুদের যুদ্ধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, ‘যুদ্ধের সেই কঠিন সময়ে পুরুষরা তখন নবিজির (সা.) পাশে ছিলেন না। তখন আমাদের গর্বিত মা হজরত মুসাইবা (রা.) রাসুলের (সা.) চারপাশ ঘুরে ঘুরে তাকে নিরাপত্তা দিয়েছেন। তিনি যখন বারণ করেননি, তাহলে নারীদের ঘরবন্দি রাখার আমরা কে? বরং মায়েরা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখতে পারেন তাদের দক্ষতা ও যোগ্যতা দিয়ে। এখন তো তাদের কোনও নিরাপত্তা নেই, মর্যাদাও দেওয়া হয় না। বিভিন্ন জায়গায় লাঞ্ছিত হচ্ছেন। কোরআনি সমাজ কায়েম হলে তারা সম্মান ও মর্যাদা ভোগ করবেন। বলতে পারবেন, আমি এ দেশের একজন গর্বিত মা।’
১৬ ডিসেম্বর ‘ভারতের বিজয় দিবস’ উল্লেখ করে মোদির দাবি প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, বাংলাদেশের পক্ষে যখন একটা কথা ভারত উচ্চারণ করে না, তখন আপনাদের (আওয়ামী লীগ) মুখে কোনও বুলি দেখি না। আমরা প্রতিবাদ করেছি, যারা দেশকে ভালোবাসে তারা প্রতিবাদ করেছে। যার চেতনা বিক্রি করে তাদের মুখে সেদিন কোনও বুলি আমরা দেখিনি। আপনাদের এই চেতনা, এই ভালোবাসা আপনাদের কাছেই রাখেন। গত সাড়ে ৫৩ বছর আমরা দেখেছি।। এখন দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যাওয়ার সময়, সেই সুযোগটা দেন। রাস্তা পরিষ্কার করে দেন।’
জাতিকে সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরুর তকমা দিয়ে বিভাজন সৃষ্টি করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘এ দেশে আল্লাহ যাদের পয়দা (সৃষ্টি) করেছেন, তারা সকলেই এ দেশের গর্বিত নাগরিক। সকলেরই সাংবিধানিক অধিকার সমান। আমরা ধর্ম-বর্ণ সবাই মিলেমিশে বসবাস করবো।’
চাঁদাবাজিকে ঘৃণিত কাজ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আমাদের সন্তানরা জীবন দিয়েছে। আমরা যেন তাদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি না করি, গাদ্দারি না করি। আপনারা দয়া করে কেউ চাঁদাবাজি, বাজারের দোকানপাট দখল, বালুমহাল-জলমহাল জোর করে দখল করবেন না। এই সমস্ত ঘৃণিত কাজের মাধ্যমে কোনও রিজিকের দরকার নেই।’
জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রসুলের সভাপতিত্বে কর্মী সম্মেলনে কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য মোবারক হোসেন, মুহাদ্দিস আব্দুল খালেক, মাওলানা আজীজুর রহমান, ঝিনাইদহ জেলা আমির আলী আযম, মাগুরা আমির এমবি বাকের, নড়াইল জেলা আমির আতাউর রহমান বাচ্চু, শহিদ আব্দুল্লাহর বাবা আব্দুল জব্বার, মাওলানা হাবিবুর রহমান, মাওলানা আব্দুল আজিজ, ড. আব্দুল মান্নান, অ্যাড. গাজী এনামুল হক, মাওলানা আরশাদুল আলম, আব্দুল কাদের, অধ্যাপক মুক্তার আলী, ইসলামী ছাত্রশিবিরের শহর সভাপতি মোস্তফা কামাল, পশ্চিম সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, জেলা ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি আশিকুজ্জামান প্রমুখ বক্তৃতা করেন।