রোজার শুরুর দিকে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১২০ টাকায়। পরে তা কিছুটা কমে আসে। ১০০, ৯০, ৮০ হয়ে কয়েকদিন আগে ৭০ টাকায় গিয়ে ঠেকে পেঁয়াজের দাম। কয়েকদিনের দিনের ব্যবধানে এখন সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন— ঈদের আগে পেঁয়াজের দাম আরো কমতে পারে।
সোমবার (১ এপ্রিল) রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাজার ঘুরে দেখা যায়, দুই-তিনদিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। শনিবারও বিভিন্ন খুচরা বাজারে, পাড়া-মহল্লার মুদির দোকানে ৭০ টাকা করে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে। সেই পেঁয়াজ দুই দিনের ব্যবধানে আজ খুচরা বাজারে ৬০ টাকা আবার কোথাও কোথাও ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২-৪ দিন আগে পাইকারি দরে যারা পেঁয়াজ কিনে এনেছিলেন, তারা পেঁয়াজের দাম কমার খবরে ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন। আর যেসব ব্যবসায়ী গতকাল (রোববার) ও আজ পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ কিনে এনেছেন, তাদের কেনা দাম কম পড়েছে। যার ফলে তারা ৫০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করতে পারছেন।
জানা যায়, ভারত থেকে সরকারিভাবে অনুমোদনপ্রাপ্ত পেঁয়াজ আমদানি শুরু হয়েছে। সেই সঙ্গে যারা এতদিন পেঁয়াজ মজুদ করে রেখেছিল, তারাও এখন বাজারে পেঁয়াজ ছাড়তে শুরু করেছে। একইভাবে কৃষকরাও তাদের পেঁয়াজ বিক্রি শুরু করেছেন। ফলে বাজারগুলোতে আগের তুলনায় অনেক বেশি পেঁয়াজ সরবরাহ হচ্ছে। যে কারণেই পেঁয়াজের দাম কমেছে। কিছুদিন আগে যে পেঁয়াজ প্রতি মণ চার হাজার বা তার উপরে বিক্রি হয়েছে সেই পেঁয়াজ এখন মোকামগুলোতে ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
পাবনা থেকে পাইকারি দরে পেঁয়াজ এনে রাজধানীতে খুচরা বিক্রি করেন মকিদুর রহমান নামের একজন ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, ভারতের পেঁয়াজ আসছে, কৃষক বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি করছে, এতদিন যারা মজুদ রেখেছিল তারাও পেঁয়াজ বাজারে ছেড়েছে; সবকিছু মিলিয়ে হঠাৎ পেঁয়াজের বাজার নেমে এসেছে। তবে যারা এক আধ সপ্তাহ আগে মাল কিনেছে, অথচ বিক্রি হয়নি তাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা। তারা এখন ৭০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ বিক্রি করলেও লস পোষাতে পারবে না। মণপ্রতি এখন পেঁয়াজের দাম অনেক কমেছে, যে কারণে রাজধানীর সব জায়গায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। একসময় চার হাজার টাকা দরে প্রতি মণ পেঁয়াজ পাবনা থেকে এনেছি। এখন পাবনাতেই ১৭০০ টাকার মধ্যে প্রতি মণ পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে।
রাজধানীর মালিবাগ এলাকার মুদির দোকানি নাজিমুদ্দিন বলেন, আমার দোকানের পেঁয়াজগুলো কয়েকদিন আগে বেশি দামে কেনা, যে কারণে বাজারে পেঁয়াজের দাম কমে যাওয়া সত্ত্বেও ৭০ টাকার নিচে পেঁয়াজ বিক্রি করলে আমার লস হবে। তবুও যেহেতু বাজার কমে গেছে, সব দোকানেই কম দাম, তাই আমাকেও বাধ্য হয়ে ৬০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি করতে হচ্ছে।
মহাখালী বাজার দিয়ে যাওয়ার সময় ভ্যানে পেঁয়াজ বিক্রি হতে দেখে দুই কেজি কেনেন বেসরকারি চাকরিজীবী আব্দুল আউয়াল। তিনি বলেন, গত সপ্তাহে ৭০ টাকা কেজি দরে পেঁয়াজ কিনেছি। আজ রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখলাম ভ্যানে কম দামে অর্থাৎ ৫০ টাকা কেজিতে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে।
একই সুরে কথা বললেন ভ্যানে পেঁয়াজ বিক্রেতাও। তিনি বলেন, পেঁয়াজের দাম কমে গেছে। দোকানগুলোতে ৬০ টাকা আর ভ্যানে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) সহকারী পরিচালক (বাজার তথ্য) নাসির উদ্দিন তালুকদার জানিয়েছেন, আজ (১ এপ্রিল) বাজারে নতুন দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৬০ টাকা। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ৭০ টাকা আর একমাস আগে ছিল ১১০ থেকে ১২০ টাকা।
গত বছর এই সময়ে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৪৫ টাকার মধ্যে। সেই হিসাবে দাম এখনো বেশিই আছে। আগামী কয়েক দিনে পেঁয়াজের দাম আরও কমবে বলে জানান কিছু ব্যবসায়ী।