কেশবপুরের কালিয়ারই এসবিএল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থেকেও বেতন উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিদ্যালয়টি গত ৩০ বছর ধরে গৌরবময় ভূমিকা ও ঐতিহ্য বহন করে চললেও কর্তৃপক্ষের অবহেলা আর মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক এস এম মনজুর রহমান উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে নিয়োমিত বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থাকার কারণে এ প্রতিষ্ঠানটি তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। এ ঘটনায় ওই এলাকাবাসীর মাঝে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
বিদ্যালয়ের অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নের কালিয়ারই গ্রামে ১৯৯৪ সালে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় ৮০ শতক জমির ওপর কালিয়ারই এসবিএল মাধ্যমিক বিদ্যালয়টি স্থাপিত হয়। বর্তমান ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ২০৮ জন শিক্ষার্থী অধ্যায়নরত রয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি প্রতিষ্ঠার সময় ইটের গাথূনির টালীর ছাউনির ৪ রুম বিশিষ্ট একটি আধাপাকা ঘর নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এর মধ্যে শিক্ষার্থীদের সংকুলান না হওয়ায় এর পাশে ৩ রুম বিশিষ্ট আরও একটি ভবন নির্মাণ করা হয়।
গত বৃহস্পতিবার ২১ ডিসেম্বব সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে জানা যায়, ২০২০ সালের ১ নভেম্বর এস এম মনজুর রহমান তৎকালীন সভাপতি ও আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতাদের মোটা অংকের অর্থ দিয়ে কালিয়ারই এস বি এল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োাগ প্রাপ্ত হন। তিনি উপজেলা মৎস্যজীবী লীগের সভাপতি হওয়ার সুবাদে প্রভাব খাটিয়ে নিয়মিত স্কুলে না এসেও প্রতি মাসের বেতন উত্তোলন করে থাকেন। বিদ্যালয় শিক্ষকদের হাজিরা খাতা দেখে জানা যায় তিনি গত ১৭ ডিসেম্বর রবিবার ও ১৮ ডিসেম্বর সোমবার হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করলেও ১৯ ডিসেম্বর মঙ্গলবার, ২০ ডিসেম্বর বুধবার ও ২২ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেননি।
আরো জানা যায়, তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় তাঁর এ সব কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পান না। এতে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ায় শিক্ষার্থী অভিভাবক ও এলাকাবাসীর মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছ। উপস্থিত এলাকাবাসী ঘটনার তদন্ত-পূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
কালিয়ারই গ্রামের শেখ বাবলুর রহমান জানান, গত ২০২০ সালে উপজেলা মৎস লীগের সভাপতি ও সুফলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম মনজুর রহমান তৎকালিন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতাদের মোটা অংকের অর্থ দিয়ে কালিয়ারই এসবিএল মাধ্যমিক বিদ্যালয়র প্রধান শিক্ষক পদে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। এর পর থেকে বিতর্কিত ওই প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ে নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না। মাসে দুএক দিন স্কুলে এসে সারা মাসের হাজিরা খাতায় সাক্ষর করে থাকেন। এর ফলে গত ৩০ বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়ানো এ প্রতিষ্ঠানটি তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে।
একই গ্রামের তৌহিদুর রহমান জানান, এস এম মনজুর রহমান এ স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োাগ পাওয়ার পর থেকে নিয়মিত স্কুলে না আসার কারণে ঐতিহ্যবাহী এ প্রতিষ্ঠানটি অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছে। তিনি সপ্তাহে দু‘এক দিন স্কুলে আসেন দুপুরের পর অথবা স্কুল শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে। এতে বিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের কথা অস্বীকার করে সহকারী শিক্ষক গোবিন্দ কুমার কুন্ডু জানান, মনজুর রহমান এ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হওয়ার পর থেকে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। তিনি নিজ অর্থে প্রতি বছর দ্ররিদ্র শিক্ষার্থীদের বই ও সব ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল পোষাক কিনে দিয়ে থাকেন। এছাড়া তিনি গভীর নলকূপ স্থাপন, সাইকেল রাখার স্থান ও নামাজ পড়ার জায়গা তৈরি করেছেন। তাতে তাঁর কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এস এম মনজুর রহমান জানান, উপজেলার সুফলাকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে মাঝে মধ্যে স্কুলে যেতে পারি না। ছাত্র-ছাত্রীদের যাতে পড়ালেখার ক্ষতি না হয় তার জন্যে নিজ অর্থে দু”জন শিক্ষক রাখা হয়েছে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এস এম জিল্লুর রশিদ বলেন, বিদ্যালয়ে নিয়মিত না আসার বিষয়ে এর আগে কেউ জানায়নি। জানালে অবশ্য ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।