দখল, চাঁদাবাজি, চোরাকারবারি ও লুটপাটে মেতে উঠেছে যশোরের শার্শা উপজেলার বাগআঁচড়ার জাহাঙ্গীর মেম্বর (সাবেক ইউপি সদস্য) ও তার ক্যাডাররা। ৫ আগষ্ট মহাবিপ্লবে পতিত হাসিনা সরকারের পতনের পর উপজেলার সর্বত্রই চলছে জাহাঙ্গীর বাহিনীর বেপরোয়া কর্মকান্ড। অভিযোগ রয়েছে ইতিমধ্যে জাহাঙ্গীর ও তার ক্যাডাররা শার্শা, নাভারণ, বাগআঁচড়া, সাতমাইল, জামতলা, উলসী,গোগা, পুটখালী, বেনাপোল, অগ্রভুলটসহ গোটা এলাকায় কায়েম করেছে ত্রাসের রাজত্ব। এসব সশস্ত্র ক্যাডারদের ভয়ে কারোর টুশব্দ করার উপায় নেই। জোর করে হাটবাজার, ঘাট, চোরাচালানী সিন্ডিকেট দখল, জমিজমা সেটেলমেন্ট করা, পারিবারিক বিরোধ মীমাংসার নামে শালিস দরবার করা, সাদা স্ট্যাম্পে জোর পূর্বক স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়া, মিল কলকারখানা দখল থেকে শুরু করে গোটা এলাকায় এক অঘোষিত স¤্রাট বনে গেছে জাহাঙ্গীর ও তার ক্যাডাররা। পুলিশী নির্লিপ্ততার সুযোগে সে দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ ও ভূক্তভোগী মহলের দাবি। বিষয়টি নিয়ে থানা পুলিশ হলেও নেই কোন প্রতিকার।
সীমান্তবর্তী জেলা যশোরকে ট্রানজিট রুট হিসেবে ব্যবহার করে চোরাকারবারীরা। বিশেষ করে যশোরের শার্শা, ঝিকরগাছা, চৌগাছা ও বাগআঁচড়া সীমান্ত সোনার বার,হরেক রকমের মাদক, বিভিন্ন প্রকারের আগ্নেয়াস্ত্র, ভারতীয় পোষাক থেকে শুরু করে শত শত ভারতীয় পন্য চোরাচালানের নিরাপদ রুট । সম্প্রতি এই রুট ব্যবহার করে পতিত স্বৈরাচারের বহু দোসর ভারতে পালিয়েছে। যাদের মধ্যে পতিত ফ্যাসিষ্ট আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নামও শোনা যাচ্ছে। একাধিক নির্ভরশীল সূত্র দাবি করেছে যশোর সীমান্তে চোরাকারবারের সাথে জড়িত জাহাঙ্গীর সিন্ডিকেটের মাধ্যমে পুটখালীর ইছামতি নদী পার হয়ে ভারতে পালিয়ে গেছে মোস্ট ওয়ান্টেড ওবায়দুল কাদেরসহ বেশ কয়েকজন ডাক সাইডের আওয়ামীলীগার। আর তাদেরকে সীমান্ত পার করে দিয়ে জাহাঙ্গীর সিন্ডিকেট আয় করেছে লাখ লাখ টাকা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাগআঁচড়ার একজন সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান বলেন, এসব লিখে কি করবেন। জাহাঙ্গীর মেম্বর ও তার বাহিনীর ক্যাডাররা এখন ধরাছোঁয়ার বাইরে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নাকি তাদের পকেটে থাকে। তাদের কুকর্ম নিয়ে টুশব্দ করার সাহস কারোর নেই। যে সাহস দেখাচ্ছে তাকে ওরা জয়বাংলা করে দিচ্ছে। বিগত ১৫ বছরে এই সিন্ডিকেট বাগআঁচড়া, জামতলা, উলসী, নাভারণ ও পুটখালী,কায়বা, গোগা সীমান্ত রুট ব্যবহার করে সোনা, মাদক ও অস্ত্রে চোরাচালানী করে কোটি কোটি টাকা আয় করেছে। ঝিনাইদহের প্রয়াত এমপি আনোয়ারুল আজিম আনারের দক্ষিন হস্ত খ্যাত জাহাঙ্গীর বিগত দিনে বড় আওয়ামীলীগার হিসেবে এলাকায় পরিচিত থাকলেও ৫ আগস্টের পর কি এক জাদুর কাটির ছোঁয়ায় রাতারাতি বিএনপির নেতা বনে গেছেন। এতো দিন যারা জাহাঙ্গীর ও তার ক্যাডারদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ ছিল এখনোও তারাই নির্যাতন , নিপীড়রেন শিকার হচ্ছে। চুন থেকে পান খসলেই জাহাঙ্গীর সিন্ডিকেটের ক্যাডাররা ধারন করছে অগ্নিমূর্তি।
একাধিক গোয়েন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, সিন্ডিকেট প্রধান জাহাঙ্গীরের নামেই শার্শা, বেনাপোল পোর্ট থানা, ঝিকরগাছা থানা, যশোর সদর থানাসত বিভিন্ন থানায় এক ডজনেরও বেশি মামলা রয়েছে। বেশ কয়েকটি মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি রয়েছে। যে কারনে গত কয়েক মাস গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দিয়ে থাকলেও ৫ আগস্ট মহা বিপ্লবের পর পুলিশী নিষক্রিয়তার সুযোগে ফের সরবে আসে জাহাঙ্গীর মেম্বর ও তার ক্যাডাররা। ভোল পাল্টে রাতারাতি তারা বিএনপি নেতাদের “ম্যানেজ” করে হয়ে ওঠে দন্ডমুন্ডের কর্তা। সাত মাইল গরুর হাট, পুটখালী সীমান্ত ঘাট, নাভারণ বাজার মোড়, জামতলার বাজার, উলসী বাজার থেকে শুরু করে গোটা এলাকায় কায়েম করে দখল বাণিজ্য ও চাঁদাবাজি। যার শিকার হয়েছেন বাগুড়ী গ্রামের মনিরুজ্জামান মণি,ইলিয়াছ কাজী, বাগআঁচড়ার আব্দু আজিজ,সুমন হোসেন,ফুলবাড়িয়া গ্রামের রাকিব হোসেন, ইদ্রিস আলী, সেলিম বক্স, পুটখালী গ্রামের লোকমান হোসেন, আব্দুল জব্বার, উলসী গ্রামের হেদায়েত আলী, জামতলা বাজারের নুর আলী তরফদার, হেমায়েত বিশ^াসসহ আরো অনেকে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করলে বাগআঁচড়া বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী বলেন, জাহাঙ্গীর মেম্বর এলাকায় এক মূর্তিমান আতঙ্কের নাম। পুলিশ, বিজিবি থেকে শুরু করে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সবাই তার কাছে ধরা। বার বার অভিযোগ দিয়েও কোন কাজ হচ্ছে না। প্রায় এক ডজন মামলার আসামী হয়েও তার দাপটে এলাকাবাসী তটস্থ। তার খুঁটির জোর কোথায় তা আমাদের জানা নেই।
এসব অভিযোগে বিষয়ে বার বার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেও জাহাঙ্গীরকে সংযুক্ত করা সম্ভব হয়নি। তার নিয়ন্ত্রনে বিভিন্ন কোম্পানীর প্রায় দুই ডজন মোবাইল সিম রয়েছে বলে জানা গেছে।