আলোচিত জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া আর নেই। আজ সোমবার (২৪ জুন) রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন তিনি।
জল্লাদ শাহজাহানের জন্ম নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গজারিয়া ইউনিয়নের ইছাখালী গ্রামে। তিনি মৃত হাছেন আলীর ছেলে। মায়ের নাম মেহের। তিন বোনের মধ্যে বর্তমানে এক বোন বেঁচে আছে।
১৯৫০ সালের ২৬ মার্চ জন্মগ্রহণ করেন শহাজাহান। মৃত্যুর সময় তার বয়স হয়েছিল ৭৪ বছর। জীবনের দীর্ঘ সময় কারাগারে বন্দি থাকায় ব্যক্তিগত জীবনে তিনি অবিবাহিত ছিলেন। তবে কারামুক্তির পর এক তরুণীকে বিয়ে করেন। টেকেনি সেই সংসার। এ নিয়ে আইনি জটিলতায়ও পড়েন তিনি।
দীর্ঘ ৩১ বছর ৬ মাস ২ দিন কারাভোগের পর ২০২৩ সালের ১৮ জুন দুপুরে কারাগার থেকে মুক্তি পান শাহজাহান। ডাকাতি করতে গিয়ে হত্যা ও অস্ত্র আইনের দুই মামলায় তার ৪২ বছরের কারাদণ্ড হয়েছিল। তবে কারাগারে জল্লাদের কাজ আর ভালো কাজের পুরস্কার হিসেবে তিনি ১০ বছর ৫ মাস ২৮ দিন রেয়াত (সাজা মওকুফ) পান। ওই দুই মামলায় তার পাঁচ হাজার টাকা করে মোট ১০ হাজার টাকা জরিমানা হয়। মুক্তির সময় কারা কর্তৃপক্ষ তা পরিশোধ করে দেয়।
ছাত্রজীবনে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া শাহজাহান অপরাধ জগতে ঢুকতেও বেশি সময় নেননি। ডাকাতি ও খুনের মতো সব অপরাধ করার দায়ে ১৯৯১ সালের ১৭ ডিসেম্বর তিনি প্রথম গ্রেফতার হয়ে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে আসেন। দুই মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে ৪২ বছরের কারাদণ্ড হয় তার। কারাগারে তার কয়েদি নম্বর ছিল ২৫৮৯/এ। সাজা কমাতে কারা কর্তৃপক্ষের কাছে জল্লাদ হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। এরপর সহযোগী হিসেবে গফরগাঁওয়ের নূরুল ইসলামকে ফাঁসি দিয়ে জল্লাদ জীবন শুরু করেন তিনি। একসময় মানিকগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে ঢাকা সেন্ট্রাল কারাগারে আনা হয় শাহজাহানকে। সেখানে তাকে প্রধান জল্লাদের আসন দেয়া হয়।
কারাগারের নথি অনুযায়ী, ‘জল্লাদ’ শাহজাহান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৬ ঘাতক- বজলুল হুদা, মুহিউদ্দিন, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মহিউদ্দিন আহমেদ, আবদুল মাজেদ এবং চার যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা আব্দুল কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, মীর কাসেম আলী ও বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীসহ আলোচিত ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেন। যে তালিকায় কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলা ভাই ও আতাউর রহমান সানীর নামও রয়েছে।