চুরির দায় সাব্বির হোসেন (২৩) নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশ। বুধবার রাত আড়াইটার দিকে থানা থেকে পালিয়ে যান ওই যুবক। এরপর জঙ্গলের রাজা টারজান বয়ের মত যশোর শহরের সিটি প্লাজা বহুতল ভবনের কার্নিশে কার্নিশে আট ঘন্টার অধিক সময় ধরে ঝুলে থাকেন।
সকাল সাড়ে পাঁচটার দিকে সিটি প্লাজার পূর্বপাশের ওয়াচ টাওয়ারের এসির উপর থেকে দুই তলা ছাদের টিনের উপর পড়ে যান ওই যুবক। পড়ে যাওয়া শব্দ ও আত্মচিৎকারে আশপাশের লোকজনের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ততক্ষণের সাব্বির কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে পালিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে সিটি প্লাজার দক্ষিণ প্রান্তে সড়কের কাছে সিটি ব্যাংকের সামনে আসে। এ সময়ে বিপুলসংখ্যক উৎসুক জনতা ও পুলিশ থাকাতে সে থাই গ্লাসের কাঁচ ভেঙে নিজের হাতে নিয়ে দর্শকদের হুমকি দিতে থাকে। যে তাকে ধরার চেষ্টা করলে খন্ড কাচের টুকরো নিজের পেটে ঢুকিয়ে সে আত্মহত্যা করবে। পরে এখান থেকে পালিয়ে আবারো সিটি প্লাজার কার্নিশে গিয়ে ওঠে। সকাল সাতটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থালে আসেন। এবং মই দিয়ে তাকে নিচে নামানোর চেষ্টা করলে সে ভবনের কার্নিশ ও সেনেটারী পাইপের ধরে পাঁচতলার উপরের দিকে উঠতে থাকে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তার প্রেমিকা কে ঘটনাস্থলে নিয়ে এসে প্রেমিকাকে দিয়ে অনেক অনুরোধ করেও তাকে নামাতে পারেনি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ৫ ঘন্টা যাবত তাকে উদ্ধার করতে না পেরে একসময় আশা ছেড়ে দিয়ে তারা ফায়ার স্টেশনে ফিরে যান। পরে লোকজন কিছুটা কম হলে সে নামতে গিয়ে ভবনের নিচে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়। এ সময়ে স্থানীয়দের সহায়তায় পুলিশ তাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ জন বিশিষ্ট হাসপাতালে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। সেখান থেকে সে বেলা সাড়ে বারোটার দিকে কারো কিছু না বলেই তার মা ও তার আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে যশোর পলিটেকনিক কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সাব্বিরের চুয়াডাঙ্গা জীবননগর বাস স্ট্যান্ডেলে এলাকার শহিদুল ইসলামের ছেলে। পূর্ব পরিচয়ের সূত্র ধরে সে যশোরে আসে এক নারীর সঙ্গে দেখা করতে। ওই নারীর সঙ্গে দিনে বিভিন্ন জায়গাতে ঘোরাফেরা করে। রাতে পূর্বের পরিচয়ের সূত্র ধরে যশোর পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট হলে একজনের ম্যাচে ওঠেন। সেখানে ফোন ও টাকা পয়সা চুরির দায়ে শিক্ষার্থীরা তাকে আটক করেন। পরে ওই যুবক যশোর এম এম কলেজে দর্শন বিভাগে পড়ুয়া তার সেই প্রেমিকাকে ফোন দিলে ওই প্রেমিকা পুলিশকে জানায়। মধ্যরাতে পুলিশ যশোর পলটেকনিক ইনস্টিটিউটে গিয়ে সাব্বিরকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। সকালে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি সাব্বির রাত আড়াইটার দিকে থানা থেকে পালিয়েছে।
বিষয়টি নিয়ে যশোর কোতোয়ালী থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, চুরির ঘটনাটা সঠিক নয়। তার এক বান্ধবীর অভিযোগের ভিত্তিতে থানার এসআই ইমরান সহ পুলিশের কয়েকজন সদস্য পলিটেকনিক কলেজের আবাসিক গিয়ে তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না থাকায় তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
যশোর ২৫০ বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ডাক্তার সাকিরুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার বেলা ১১টি ৫৫ মিনিটে পুলিশ ওই যুবককে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। পুলিশ আমাদেরকে জানায় সে ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে গুরুতর আহত হয়েছে। পরে জরুরী ভিত্তিতে তাকে সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। এরপর বেলা একটা সময়ে জানতে পারি ওই যুবক ও তার পরিবারের লোকজন ওয়ার্ডের কাউকে কোন কিছু না বলেই পালিয়ে গেছে।