কয়েকজন লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন তালিকা নিশ্চিত করতে। সেখানে নাম-ছবির সঙ্গে মিলিয়ে সই-টিপসই নেওয়া হলে চলে যাচ্ছেন টাকা জমা দিতে। পরে ৪৫০ টাকা জমা দিয়ে গোডাউন থেকে ৩০ কেজির বস্তা উঠিয়ে কেউ মাথায়, কেউবা বাইসাইকেল, ভ্যান অথবা ইজিবাইকে চাল নিয়ে খুশি মনে বাড়ি ফিরছেন। এমনই দৃশ্য চোখে পড়েছে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার নাভারণ ইউনিয়নের কলাগাছি গ্রামের নাসির উদ্দিনের ডিলার পয়েন্টে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১৫ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল বিতরণ চলছে সেখানে।
গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর যশোর জেলাজুড়ে এই চাল বিতরণে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও চাল উত্তোলন করতে টাকা জমা না দেওয়ায় বিপাকে পড়েন সুবিধাভোগীরা। বাড়ানো হয় টাকা জমা দেওয়ার মেয়াদ। তবে জেলার অধিকাংশ ডিলার গা ঢাকা দেওয়ায় এ কর্মসূচি বাধাগ্রস্ত হয়। এছাড়া দিনে-দুপুরে নাভারণ ইউনিয়নের হাড়িয়া নিমতলা এলাকার হাসানের ডিলার পয়েন্ট থেকে ৩০৫ বস্তা চাল লুটেরও ঘটনা ঘটে। চাল বিতরণ যখন অনিশ্চিত তখন অসহায় হতদরিদ্রদের বিষয়টি মাথায় রেখে কলাগাছির নাসির উদ্দিনের ডিলার পয়েন্টে চাল বিতরণে এগিয়ে আসে স্থানীয় বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের কর্মী-সমর্থকরা। অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে নিজেদের কাঁধে দায়িত্ব তুলে নিয়ে সফলভাবে এ ডিলারের আওতায় ৫৪৪ জন কার্ডধারীকে বুঝিয়ে দিয়েছেন ৩০ কেজি করে চালের বস্তা। এতে সুবিধাভোগীদের মুখে হাসি ফুটেছে। তারা স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন।
সুবিধাভোগী শরীফপুর গ্রামের পঞ্চাশোর্ধ্ব সিয়ার আলী বলেন, অন্যের জমিতে মজুরির কাজ করে কোনোমতে সংসার চালাই। ১৫ টাকা কেজির চাল নিয়েই আমাদের সংসার কোনোমতে চলে যায়।
কলাগাছি গ্রামের মিজাক আলী সরদারের স্ত্রী রহিমা বেগম বলেন, ২২ বছর আগে স্বামীকে হারিয়েছি। সেই থেকে একাকী জীবন সংগ্রাম শুরু। বছরে পাঁচবার এই চাল পেয়ে খেয়ে-পরে বেঁচে আছি। সরকার পরিবর্তনের পর মনে করেছিলাম আর চাল পাবো না। এখন বিএনপির লোকজনের উদ্যোগে চাল পেয়ে নিরাশা দূর হয়েছে।
কার্ডধারী উত্তর দেউলী গ্রামের সিরাজ মোল্লা (৭০) বলেন, শুনলাম এই চাল বিতরণ নিয়ে অন্য সব জায়গায় ঝামেলা হচ্ছে। তবে এখানে স্থানীয় বিএনপির লোকজনের সহযোগিতায় খুব সুন্দরভাবে চাল উত্তোলন করতে পেরেছি ।
বিতরণকালে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় বিএনপি নেতা আলমগীর হোসেন, নাভারণ ইউনিয়ন যুবদল নেতা মাসুদ রানা মিঠু, ওয়ার্ড যুবদল নেতা আরিফ খাঁন, শাহীন হোসেন, ছাত্রদল নেতা সেলিম আহমেদ প্রমুখ।
যুবদল নেতা মাসুদ রানা মিঠু বলেন, ১নং ওয়ার্ড (কলাগাছি-উত্তর দেউলী) বিএনপির সাবেক সভাপতি আব্দুস সামাদ ও বিএনপি নেতা আয়নাল হোসেনের নির্দেশনা অনুযায়ী এলাকায় কোনো অন্যায়-অনিয়ম মেনে নেওয়া হবে না। যাদের নামে কার্ড রয়েছে তারাই চাল পাবেন। তবে আওয়ামী লীগ কোটায় পাওয়া ধনীদের নাম বাদ দিয়ে প্রকৃতপক্ষে যারা হতদরিদ্র তাদের নাম অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান তিনি।
ঝিকরগাছা উপজেলা ফ্যামিলি প্লানিং ইন্সপেক্টর ও চাল বিতরণের তদারকি কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, কলাগাছি ডিলার পয়েন্টে সরেজমিনে গিয়েছিলাম। স্থানীয়দের সহযোগিতায় কোনো অভিযোগ ছাড়াই সেখানে চাল বিতরণ করা হচ্ছে।