বাঘারপাড়ায় আওয়ামীলীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আড়াম্বর পরিবেশে পালন না হওয়ায় নেতা কর্মীদের মাঝে হতাশা ও ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। সিনিয়র দুই একজন নেতা এ বিষয়ে মুখ খুললেও কমিটি থেকে বাদ পড়ার ভয়ে অধিকাংশরা কোন কথাই বলছেন না।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলীর নেতৃত্বে দিনটি উপলক্ষে রবিবার সকালে শতাধিক কর্মীর একটি র্যালী বের হয়। র্যালীতে এমন কাউকে দেখা যায়নি যিনি বিগত দিনে উপজেলা আওয়ামীলীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের দায়িত্বশীল কোন পদ পদবীতে ছিলেন। র্যালী শেষে হাসান আলী ও তার অনুসারিরা উপজেলা চত্ত্বরে বঙ্গ বন্ধুর ম্যুরালে ফুল দেন। এরপর উপজেলা আওয়ামীলীগের কার্যালয়ে সংক্ষিপ্ত এক আলোচনা সভার আয়োজন করে। এতে সভাপতিত্ব করেন হাসান আলী নিজেই। এ সভায় উল্লেখ করার মত উপস্থিত ছিলেন দোহাকুলা ইউনিয়নের ইন্দ্রা ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক(হাসান আলীর চাচাত ভাই) ফুল মিয়া।
একটি সূত্রে জানাগেছে, ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে কথিত কাউন্সিলে বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষনা করা হয়। এতে সভাপতি হন সাবেক এমপি রনজিত কুমার রায় ও সাধারণ সম্পাদক পদে হাসান আলী। সূত্রের দাবি, তখন হাসান আলীর থেকে যোগ্য নেতা থাকলেও রণজিৎ রায় ভিন্ন কৌশলে হাসান আলীকেই সাধারণ সম্পাদক মনোনীত করেন। কিছুদিন যেতে না যেতেই রণজিৎ কুমার রায় ও হাসান আলরী মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়। এরপর থেকে অদ্যবধি কোন কমিটি গঠন হয়নি। এরপর বিভিন্ন নির্বাচন যেমন, জেলা পরিষদ, ইউনিয়ন, পৌরসভা, জাতীয় ও সর্বশেষ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে কয়েকটি গ্রুপে বিভক্ত হয়েছে বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতা কর্মী।
একটি সূত্র জানিয়েছে, সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে সাবেক এমপি ও বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি রণজিৎ কুমার রায়ের ছেলে রাজিব রায় শোচনীয়ভাবে পরাজিত হওয়ায়ার পর তিনি বাঘারপাড়ার তার অনুসারিদের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছেন।
বাঘারপাড়া উপজেলা ছাত্র লীগের সাবেক এক নেতা জানিয়েছেন, যশোর জেলা আওয়ামীলীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক বিপুল ফারাজি উপজেলা নির্বাচনে ব্যাপক ব্যবধানে বিজয়ী হয়েছেন। সবার প্রত্যাশা ছিলো তিনি হয়তো আওয়ামীলীগের প্লাটিনাম জয়ন্তিটা আড়াম্বর আয়োজনে পালন করবেন। বিপুল ফারাজী ও তার অনুসারিরা কেউই কোন অনুষ্ঠান করেননি। নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর তিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের দলীয় কার্যালয়ে যাননি। এমনকি তিনি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে শ্রদ্ধা নিবেদনও করেননি। এসব কারণে বিপুল ফারাজি বেশ সমালোচিত হচ্ছেন।
বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও রায়পুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বিল্লাল হোসেন জানিয়েছেন, বাঘারপাড়া আওয়ামীলীগে এখন চলছে কমিটি কমিটি খেলা। যে কমিটিতে শুধুই আত্বীয়করন ও টাকাওলাদের পদ দেওয়ার চেষ্টা চলছে। যে কারণে দলের ত্যাগিরা মনোকষ্টে ভুগছে। যার বর্হিপ্রকাশ হয়েছে দলের প্রতিষ্টা বার্ষিকীতে। তাদের ডাকে আর কেউই এখন সাড়া দিচ্ছে না।
বিগত কমিটির আরেক সাংগঠনিক সম্পাদক প্রভাষক নজরুল ইসলাম জানিয়েছেন, যে দলটি পরপর চার মেয়াদে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আছে, সেই দলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী নীরবে পালন হবে তা কোন নেতা কর্মীর কাম্য না। দলটি প্রতিষ্ঠার ৭৫ বছর পূর্ণ করেছে, যাকে আমারা বলি প্লাটিনাম জয়ন্তি। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী প্রতি বছরই পালন হবে। কিন্ত এই প্লাটিনাম জয়ন্তিতো আর পাবো না। নজরুল ইসলাম আরো জানিয়েছেন, তার জানামতে বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালনের জন্য বাঘারপাড়ার কোন দায়িত্বশীল নেতার সাথে সমন্বয় করেননি। ফলে যা হবার তাই হয়েছে।
বাঘারপাড়ায় আওয়ামীলীগের ৭৫ বছর পূর্তীতে আড়াম্বর কোন অনুষ্ঠান না সম্পর্কে বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সভাপতি বঙ্গবন্ধু কণ্যা প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি ঘোষনা ছিল কোন রানিং এমপি দলের সভাপতি বা সাধারণ সম্পাদকের পদ পাবেন না। তার পরেও আমরা দেখলাম ২০১৯ সালের ১৭ নভেম্বর বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় নেতারা সভাপতি পদে রানিং এমপি রণজিৎ কুমারের নামটাই ঘোষনা করলেন। মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী মনে প্রাণে আওমীলীগ করলেও এ দলে তার কোন ত্যাগ নেই। কোন দিনই তিনি দলের কর্মীদের পেছনে খরচ করেননি। অথচ কেন্দ্রের নেতারা সাধারণ সম্পাদক পদে সেই হাসান আলীর নামই ঘোষনা করলেন। প্রায় পাঁচ বছর গত হলে চললো আজও বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের একটি পূর্ণাঙ্গ কমিটি তৈরী হয়নি। যারা পা চেটে পদ পদবী নিতে চান, শুধু তারাই ঐ দুইজনের কাছে ঘুরঘুর করছে। বাকিরা সবাই নিরব হয়ে হয়ে গেছে। তারা দুইজন বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের জন্য কতটা করেছেন তা সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে বুজ পেয়েছেন। হাসান আলী কাইকে না পেয়ে নির্বাচনের আগের দিন রাতে ভোট থেকে সরে দাড়িয়েছে। আর রণজিৎ রায়ের ছেলেরতো জামানত বাজেয়াপ্ত হওয়ার মত অবস্থা। সোলাইমান হোসেন ক্ষোভের সুরে বলেন, কেন্দ্রের সেই নেতারা খোঁজ নিয়ে দেখুক কেন বাঘারপাড়ায় আওয়ামীলীগের ৭৫ বছর পূর্তীর অনুষ্ঠান হয়নি, আর দলের সভাপতি রণজিৎ রায় কেন বিশেষ এই দিনে বাঘারপাড়ায় আসেননি। এ অবস্থা অব্যহত থাকলে দলের সক্রীয় কর্মীরা হারিয়ে যাবে।
বর্তমান সময়ে বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সব থেকে প্রবীন নেতা হচ্ছেন আতিয়ার রহমান সরদার। তিনি এক সময় ধলগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছিলেন। বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের গত কমিটির তিনি সিনিয়র সহ সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। আতিয়ার সরদার ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেছেন, রণজিৎ রায় শুধু নিয়োগ বানিজ্যটাই করেছেন। দল সংগঠিত করার বদলে তিনি গ্রুপ আর উপ গ্রুপ সৃস্টি করেছেন। তিনি অপ কৌশলের মাধ্যমে একজন অযোগ্য লোককে সাধারণ সম্পাদক বানিয়েছেন। সেই দলের অবস্থা কিইবা আর হবে! তারা দুইজনই এখন কমিটিতে পদ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে সবার সামনে মূলা ঝুলাই রেখেছে।
বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী জানিয়েছেন, সদ্য উপজেলা নির্বাচন সমাপ্ত হয়েছে। কেউ আছে বিজয়ের আনন্দে, কেই আছে হতাশায়। দীর্ঘদিন কমিটি না হওয়ায় অনেকেই নীরব হয়ে গেছেন। অনেকেই আছেন ক্ষুব্ধ হয়ে। বর্তমান সময়ে দৃশ্যমান চার ভাগে ভাগ হয়েছে বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের নেতা কর্মী। তার ভিতর আবার উপ গ্রুপও আছে। এই অবস্থায় অনুষ্ঠন করা খুবই কঠিন। অনুষ্ঠানের ব্যয়ও একটি বড় বিষয়। যারা দলের সুবিধা নিয়ে আয় রোজগার করেছে তারা আর ফিরেও তাকাচ্ছে না। তবে, আমি সল্প পরিসরে যেটুকু পেরেছি তাই করেছি। অনুষ্ঠান করার আগে বাঘারপাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি সাবেক এমপি রণজিৎ কুমার রায়কে ফোনে অনুষ্ঠানের বিষয়টি জানিয়েছিলাম। তিনি সম্মতিটুকুই দিয়েছেন।