মাত্র আধা বর্গকিলোমিটার এলাকায় বছরজুড়ে চলে ২০ হাজার কোটি টাকার কর্মযজ্ঞ ও অর্থের লেনদেন। এই ছোট্ট শহরের ব্যবসা-বাণিজ্য অর্ধলক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। আর ব্যবসা-বাণিজ্যের ওপর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নির্ভরশীল প্রায় তিন লাখ মানুষ। বলছিলাম ভৈরব নদের কোল ঘেঁষে গড়ে ওঠা অভয়নগর নওয়াপাড়া নদী বন্দরের কথা।
এ সব কিছু সম্ভব হয়েছে নদকে কেন্দ্র করে। তবে দখলের কারণে সেই ভৈরব নদ ধুঁকছে। নদে জমছে পলি। ব্যবসায়ী-শ্রমিকদের দাবির পরও দখলমুক্ত হচ্ছে না নদটি। হচ্ছে না নিয়মিত খনন। নদটি কোথাও কোথাও শীর্ণ আকার ধারণ করেছে। নদে পণ্যবাহী কার্গোজাহাজগুলো ঠিকমত চলাচল করতে পারে না। প্রায়ই সেগুলো ডুবে যায়। ক্ষতি হয় কোটি কোটি টাকার।
অভয়নগর নওয়াপাড়া পৌর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি ফাল্গুন মন্ডল বলেন, এখানে পণ্য ওঠানো-নামানোয় অতীতে অর্ধশত হ্যান্ডলিং শ্রমিক কাজ করলেও পণ্য লংবুমের ব্যবহার বাড়ায় বর্তমানে মৌসুমে ২০ থেকে ২৫ হাজার শ্রমিক এবং অন্য সময়ে ১০ থেকে ১২ হাজার শ্রমিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন। কিন্তু নদের নাব্যতা নেই ফলে নদের ড্রেজিং না হলে শ্রমিকদের কাজ থাকবে না।
জানা গেছে, ২০০৬ সালে নওয়াপাড়াকে নদীবন্দর ঘোষণা দেওয়ার পর নদীবন্দরের কার্যক্রম শুরু হয় ২০০৭ সালে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) হিসাব অনুযায়ী, উপজেলায় ভৈরব নদের তীরে অবৈধ স্থাপনা ছিল ৮৬টি। ২০১৬ সালের অক্টোবরের মধ্যে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ও বিআইডব্লিউটি’র সহযোগিতায় দুই ধাপে ৫৯টি স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। বাকি ২৭টি স্থাপনার পরবর্তিতে উচ্ছেদের দাবি করা হলেও সেগুলোর অধিকাংশই সেভাবে রয়েছে। বরং অবৈধ স্থাপনার সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
নওয়াপাড়া নদীবন্দর কর্তৃপক্ষের একটি সূত্র বলছে, অভয়নগরের ভাটপাড়া থেকে মহাকাল শ্মশানঘাট পর্যন্ত আট কিলোমিটার এলাকায় রয়েছে ওই সব অবৈধ স্থাপনা। এদের মধ্যে আঞ্চলিক কর কমিশনারের ভাড়া করা কার্যালয়, নওয়াপাড়া হাইওয়ে থানার সীমানা প্রাচীর এবং কয়েকজন প্রভাবশালী বড় ব্যবসায়ীর গুদাম রয়েছে। করোনাকালে শ্রমিকের পরিবর্তে যান্ত্রিকভাবে (লং বুম স্কেভেটর দিয়ে) বার্জ, কার্গো ও কোস্টার থেকে পণ্য খালাস করতে নদের মধ্যে ২২টি জেটি নির্মাণ করা হয়। মাটি ভরাট করে তৈরি এসব জেটির কয়েকটি একবার অপসরণ করা হলেও পরে সেগুলো আবার স্থাপন করা হয়েছে।
নওয়াপাড়া নদীবন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক মাসুদ পারভেজ বলেন, ৪৩ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০১৭ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত নৌপথটির সাড়ে ২৭ কিলোমিটার খননের কাজ শেষ হয়। মাঝে ছয়মাস খননকাজ বন্ধ ছিল। এরপর থেকে নওয়াপাড়া নদীবন্দরে ভৈরবের প্রায় সাড়ে ১২ কিলোমিটার এলাকায় মেইনটেইনেন্স ড্রেজিং চলমান আছে।
তিনি বলেন, ২০১৬ সাল থেকে শুরু করে সর্বশেষ ২০২০ সাল পর্যন্ত ভৈরব নদের দু’একটি বাদে প্রায় সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। মে মাসের ২৪-২৫ তারিখের পর নদে থাকা সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে পুনরায় অভিযান শুরু করা হবে।
নওয়াপাড়া নদীবন্দর দিয়ে প্রতিবছর পণ্য আমদানি বাড়ছে। যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি ও আমদানিকারক মিজানুর রহমান খান বলেন, ব্যবসা অনুযায়ী ব্যবসায়ীদের সুযোগ-সুবিধা বাড়ছে না। সব ধরনের জাহাজ যাতে নওয়াপাড়ায় পৌঁছায়, সে জন্য সারা বছর ভৈরব নদটি খনন করতে হবে। বন্দরের অবকাঠামো ও সেবার মান বাড়ালে ব্যবসায়ীরা আরও আগ্রহী হবেন। ব্যবসা-বাণিজ্য আরও বাড়বে।
এ বিষয়ে যশোর-৪ আসনের সংসদ সদস্য এনামুল হক বাবুল বলেন, আমরা চেষ্টা করছি নদ দখলমুক্ত করে ও খননের মাধ্যমে নদের নাব্যতা ফেরাতে। তবে ভৈরব নদের উপর বাকে ব্রিজ নির্মাণ করায় সহজে পলি জমছে নদে। এটাও নদী ভরাটের অন্যতম কারণ।