৬ষ্ঠ উপজেলা পরিষদের ২য় ধাপে যশোরের শার্শা, ঝিকরগাছা ও চৌগাছায় নির্বাচন আগামীকাল ২১ মে। এরই মধ্যে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সকল প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রেখে যশোরবাসীকে অবাধ, সুষ্ঠু এবং উৎসবমুখর ভোটের পরিবেশ করে দিতে প্রস্তুত যশোরের প্রশাসন। তবে বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে শার্শা উপজেলা। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে এই উপজেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও বেশি কঠোর করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার। রোববার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান।
পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, নির্বাচনের পূর্ব প্রস্ততি, নির্বাচনের দিন এবং নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতা রুখতে জেলা পুলিশ কঠোর অবস্থানে রয়েছে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাইলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। বিশেষ করে যশোরের শার্শা উপজেলায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিত স্বাভাবিক রাখতে কঠোর অবস্থানে রয়েছে পুলিশ।
তিনি জানান, ২য় ধাপের নির্বাচনে তিন উপজেলায় ২ হাজার পুলিশ ফোর্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এরমধ্যে শার্শা উপজেলায় থাকবে ১ হাজার পুলিশ সদস্য। সাধারণত প্রতিটি কেন্দ্রে ৩ থেকে ৫ জন পুলিশ সদস্য এবং ৫টি কেন্দ্রের জন্য ১টি মোবাইল টিম থাকে। তবে শার্শায় প্রতিটি কেন্দ্রে একজন উপ-পরিদর্শক ৭ জন পুলিশ সদস্যসহ ৩টি কেন্দ্রে ১টি মোবাইল টিম থাকবে। এছাড়াও অন্য উপজেলায় প্রতিটি ইউনিয়নে ১টি করে স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকলেও শার্শাতে প্রতি ইউনিয়নে থাকবে ২টি স্ট্রাইকিং ফোর্স। এরপর র্যাব, বিজিবি, আনসার সদস্য রয়েছে। ফলে কোন চক্র নির্বাচনে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারবে না। ভোটাররা স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে নিরাপদে বাড়িতে ফিরে যাবেন বলেও আশ্বস্ত করেছেন তিনি।
এছাড়াও প্রতি উপজেলায় ২ প্লাটুন বিজিবি থাকলেও শার্শা উপজেলায় অতিরিক্ত ২ প্লাটুন বিজিবি থাকবে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার। জেলা প্রশাসক বলেন, একজন ভোটার যেন নিরাপদে ভোটকেন্দ্রে আসতে পারেন, স্বাধীনভাবে ভোট প্রদান করে নিরাপদে বাড়ি ফিরতে পারেন, তা নিশ্চিত করতে আমরা বদ্ধ পরিকর। কেবল নির্বাচনের দিনই নয়, নির্বাচনপূর্ব ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে যে কোন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা এড়াতে ভোটগ্রহণের দুই দিন আগে ও পরে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সক্রিয় থাকবে মোবাইল ও স্ট্রাইকিং ফোর্সের সদস্যবৃন্দ।
তিনি আরো বলেন, ভোটারদের ভীতি প্রদর্শন, ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা প্রদান কিংবা যে কোন ধরনের বলপ্রয়োগের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করবে জেলা প্রশাসন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ও রিটার্নিং অফিসার এস এম শাহিন বলেন, ইতোমধ্যে তিনটি উপজেলাতেই ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের ইভিএমসহ সকল নির্বাচনী সামগ্রী বুঝিয়ে দেয়া হবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং গোয়েন্দা সংস্থাসমূহের সার্বিক সমন্বয় নিশ্চিত করতে একটি আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী সেল গঠন করা হয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে উপজেলাভিত্তিক ভিজিল্যান্স ও অবজারভেশন টিম এবং নির্বাচনী মনিটরিং টিম থাকছে। নির্বাচনকালীন সার্বিক আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নজরদারি ও প্রযোজ্য ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে ১৯ মে থেকে তিন উপজেলায় এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে সার্বক্ষণিক টহল পরিচালনা করা হচ্ছে। ভোটগ্রহণের দুই দিন আগে থেকে ভোটগ্রহণের দুই দিন পর পর্যন্ত মোট ৫ দিন এই টহল কার্যক্রম চলবে। এছাড়াও প্রতিটি উপজেলায় ১ জন করে মোট ৩ জন জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে তিন উপজেলায় মোবাইল টিম ও স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে মোট ১ হাজার ৭৭৮ জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। ৩ উপজেলায় মোট ৬০ জন র্যাব সদস্য, ৬০ জন আনসার সদস্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে দায়িত্ব পালন করবেন। মোট ৮ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হচ্ছে। নির্বাচনের দিন বিভিন্ন বাহিনীর ইউনিফর্মধারী সদস্যরা ছাড়াও সক্রিয় ভূমিকায় থাকবেন সাদা পোশাকের পুলিশ সদস্য এবং গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যবৃন্দ।
সহকারী রিটার্নিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিন উপজেলার নির্বাহী অফিসারবৃন্দ। ঝিকরগাছা উপজেলার ১১০টি, শার্শা উপজেলার ১০২টি এবং চৌগাছার ৮১টি কেন্দ্রে আগামী ২১ মে সকাল আটটা থেকে একযোগে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।