যশোরে হরহামেশেই ঘটছে চুরির ঘটনা। প্রায়ই শোনা যাচ্ছে কারো বাসাবাড়ি, কারো অফিস কিংবা দোকানে চুরি করে মালামাল নিয়ে গেছে চোরচক্র। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার ভোর রাতে যশোর শহরতলীর বাহাদুরপুরে এবং ঝুমঝুমপুরে বিজিবি ক্যাম্পের সামনে দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শার্টারের তালা কেটে মালামাল নিয়ে গেছে। বাহাদুরপুরের ঘটনায় যশোর কোতোয়ালি থানায় লিখিতভাবে জানানো হলেও ঝুমঝুমপুরের ঘটনা বিষয়ে সর্বশেষ তথ্য জানা যায়নি।
এদিকে, পুলিশের হিসেবে চলতি বছরের ৬ মাসে যশোরে মাত্র ৬৫টি চুরি সংঘটিত হয়েছে। কিন্তু সূত্রের দাবি, সব চুরির ঘটনা থানা-পুলিশ পর্যন্ত পৌঁছে না। অনেকে ঝামেলা বাড়ার আশংকা থেকে পুলিশকে জানাতে চায় না। কিন্তু ফেসবুক কিংবা পরিচিতজনের কাছে চুরি হওয়ার কথা প্রকাশ করে। পুলিশকে না জানানোয় থানায় এর রেকর্ড থাকে না। এ কারণে পুলিশের খাতায় যে হিসেব রয়েছে এর চেয়ে কয়েক গুণ বেশি চুরির ঘটনা ঘটেছে। এমন পরিস্থিতিতে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা রয়েছে ব্যবসায়ী ও বাসাবাড়ির মালিকদের মাঝে।
জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাঝেমধ্যে অন্য সব ঝামেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকার সুযোগে সংঘবদ্ধ চোর চক্র সক্রিয় হয়ে উঠে বলে বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ হয়। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার ভোর রাতে যশোর শহরতলীর বাহাদুরপুরে সততা স্যানিটারি ও সততা ইলেক্ট্রিক এন্ড হার্ডওয়্যারে এবং ঝুমঝুমপুরে বিজিবি ক্যাম্পের সামনে আরআর এন্টারপ্রাইজ নামে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের শার্টারের তালা কেটে মালামাল নিয়ে গেছে।
বাহাদুরপুরের ঘটনায় যশোর কোতোয়ালি থানায় লিখিতভাবে জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী ওমর ফারুক অপু। তিনি বলেছেন, বৃহস্পতিবার ভোর রাতে চোরচক্র প্রতিষ্ঠানের শার্টারের তালা কেটে দোকানে প্রবেশ করে টাকাসহ অন্তত ৫ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে গেছে।
একই দিন ভোর রাতে ঝুমঝুমপুর বিজিবি ক্যাম্পের সামনে আর.আর এন্টারপ্রাইজে চুরি হয়েছে। ক্লপসিবল গেইট ও সার্টারের ৫টি তালা কেটে ৯০টি ব্যাটারি ও নগদ ৭ লাখ টাকা নিয়ে গেছে চোরেরা। প্রতিষ্ঠানের মালিক মাসুদ রানা জানান, রাত ৩টার দিকে তালা কেটে দোকানে প্রবেশ করে ইজিবাইক ও রিক্সার ৯০টি ব্যাটারি, নগদ ৭লক্ষ টাকা, ব্যাংকের চেকবই সহ মূল্যবান কাগজপত্র এমনকি সিসিটিভির ডিভিআরও নিয়ে গেছে চোরেরা।
গত ১ জুলাই ভোর রাতে ভোলা ট্যাংক রোডে ছিনতাইকারীরা নগদ টাকা ও মোবাইল ফোনসহ দেড় লাখ টাকার ক্ষতি করেছে এক পথচারীর।
যশোর শহরের বেজপাড়া কবরস্থান রোডে মমতাজ ভিলায় বসবাস করেন ছাত্রদল নেতা তানভীর আহম্মেদ জুয়েল। গত ৩০ জুন রাতে তার মামার মৃত্যুর খবর শুনে পরিবারের সবাই রাজশাহী চলে যান। ২ জুলাই ফিরে এসে দেখেন ঘরের পিছনে দিকে বাথরুমের জানালার কাছে গ্রিল ভাঙ্গা। এরপরে ঘরে ঢুকে দেখেন আলমারির তালা ভাঙ্গা এবং ঘরের মালামাল এলোমেলো। ঘরে থাকা আলমারিতে রাখা স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা, মোবাইল ফোনসেটসহ প্রায় দেড় লাখ টাকার মালামাল নিয়ে গেছে চোরেরা। এছাড়া বেজপাড়া তালতলা একটি দোকানে একই রাতে চুরি হয়। সেখান থেকে মূল্যবান মালামাল ও নগদ টাকাসহ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।
গত বছরের ২৪ ও ২৫ ডিসেম্বর রাতে শুধুমাত্র যশোর শহরের ষষ্ঠীতলা পাড়াতেই ৪টি বাসায় চুরি হয়েছে। এর মধ্যে ওই এলাকার বাসিন্দা পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি প্রবীর কুমার ও জয়তী সোসাইটি যশোরের নির্বাহী পরিচালক অর্চনা বিশ্বাস ইভার বাড়িও রয়েছে। অধিকাংশ চুরির ঘটনায় স্পষ্ট ও অস্পষ্টভাবে সিসিটিভি ফুটেজে দেখা গেলেও উদ্ধার হচ্ছে না চোরাই মালামাল। আটক কিংবা শনাক্ত হয়নি চোর চক্রের সদস্যরা।
গত বছরের ২৫ ডিসেম্বর চুরি হয়েছে শহরের ষষ্ঠীতলা পাড়ার সোমা রায় চৌধুরী ও অমিত রায় চৌধুরী দম্পতির বাসায়। চোরচক্র তাদের বাড়ির গ্রিল ভেঙে, আলমারি ভেঙে কাপড় পিতল কাঁসা ও অলংকার নিয়ে যায়। ২৩ ডিসেম্বর একই এলাকার ডাক্তার ঝর্ণার বাড়িতে চুরি হয়েছে। বাড়ির গ্রিল ভেঙে বাড়ির জিনিসপত্র নিয়ে চম্পট দিয়েছে চোর চক্র। এর আগে ৭ জানুয়ারি জিলা স্কুলের সামনের ঘরোয়া স্টোরে চুরি সংঘটিত হয়। নগদ টাকা, মোবাইল, ফ্লেক্সিলোডের কার্ড ও ভোজ্য তেল নিয়ে যায়। এর এক মাস আগে যশোরের ষষ্ঠীতলাপাড়ায় ধীমান এন্ট্রারপ্রাইজ মুদিখানায় চুরি হয়। ওই দোকানের সার্টার ভেঙে নগদ টাকাসহ লক্ষাধিক টাকার মালামাল নিয়ে যায় সংঘবদ্ধ চোর চক্র। চুরির দৃশ্য সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায় দোকানের মালামাল তছনছ করা। চোর চক্র ভেতরে ঢুকে ক্যাশ ড্রয়ার ভেঙে নগদ টাকা, ৩টি মোবাইল ফোন সেট এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ে থাকা টাকাসহ নিয়ে যায়। এছাড়া কয়েক কার্টুন দামি সিগারেট এবং কয়েক কার্টুন ভর্তি সোয়াবিনের বোতল নিয়ে যায়।
একই এলাকার উজ্জলের মুদিখানায় চুরি সংঘটিত হয়। নগদ টাকা গ্যাস সিলিন্ডারসহ ৩ লাখ টাকার মালামাল নিয়ে যায়। দুটি ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ পুলিশকে সরবরাহ করা হলেও কোনো অগ্রগতি নেই মালামাল উদ্ধার কিংবা চোর আটকে। পুলিশ কয়েকদিন তদন্তে স্পটে গেলেও কার্যকরি কোনো ব্যবস্থা নেননি বলে অভিযোগ দোকানী ধীমান ও উজ্জলের।
এদিকে, চুরির শিকার জয়তী সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক অর্চণা বিশ্বাস ইভা ও অমিত রায় চৌধুরী জানিয়েছেন, হঠাৎ চুরি বেড়ে গেছে। শুধু তারা নয়, আরো অনেকের বাড়িতে চুরি হচ্ছে।
এ ব্যাপারে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাকে আন্তরিক হতে হবে। আইন শৃংখলা ও মানুষের জান মালের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে।
ভুক্তভোগী দোকানী জাহাঙ্গীর আলম সেলিম জানিয়েছেন, তার দোকানে চুরি হয়েছে। জিলা স্কুলের সামনে বড় সড়ক ঘেঁষা তার দোকান। তার দোকানে চুরির ঘটনায় মুজিব সড়কে দোকানীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। তিনি ওই এলাকায় জোরালো অভিযান দাবি করেছেন।
এলাকার খান এন্টারপ্রাইজের মালিক ওয়াহেদ খান জানিয়েছেন, যশোরের বিভিন্ন স্পটে প্রায়ই চুরি হচ্ছে। এসব চুরির ঘটনায় আটক ও মাল উদ্ধার না থাকায় সংঘবদ্ধরা আরো সাহস পেয়ে যাচ্ছে। তার এলাকার বাসিন্দা পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি প্রবীর কুমার ও সোমা রায়ের বাড়িতে চুরির ঘটনায় পুলিশের এসআই আল আমিন ও তরিকুল ইসলাম পরিদর্শন করে গেছেন। জানি না তারা কতদূর কি করবেন। তবে এর আগে ষষ্ঠীতলাপাড়ায় চুরির ঘটনায় আটক ও উদ্ধার হয়নি।
এ ব্যাপারে যশোর কোতোয়ালি থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) একেএম সফিকুল আলম চৌধুরী জানিয়েছেন, বিচ্ছিন্নভাবে কিছু চুরির ঘটনার তথ্য থানায় আসে। যদি কেউ লিখিতভাবে থানা পুলিশকে জানায় তাহলে পুলিশ ব্যবস্থা নিতে পারে। তাছাড়া চুরির ঘটনায় অনেককে আটক ও করা হয়। তবে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।