যশোর সিটি ক্যাবল (প্রাঃ) লিঃ কোম্পানিকে ১২০ দিনের মধ্যে বৈধ শেয়ার হোল্ডারদের নিয়ে বার্ষিক সাধারণসভা (এজিএম) করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এর বিধান অনুযায়ী সমস্ত পদক্ষেপ গ্রহণ। রেজিস্ট্রিশনের সময় যে ২০ জন শেয়ার হোল্ডারের নাম উল্লেখ রয়েছে, শুধুমাত্র তারা এজিএমে অংশ নিতে পারবেন। অবৈধপন্থায় যাদের শেয়ারহোল্ডার করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের মহামান্য বিচারক।
রিট মামলার রায়ে কিছু শর্তারোপ করেছেন বিচারক। তা হলো- ইছামতি-২ (৭৮) ভবন রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনার জন্য আইএফআইসি ব্যাংকে ০১৯০২৬৬৫৩৩০৩ নং হিসাবে দুই লাখ টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে। নিরান্টর ইনিশিয়েটিভ ট্রাস্টের অনুকুলে ডাচ বাংলা ব্যাংকে ২৭৫১১০০০০৪৯৯৪ হিসেবে আরও ৫০ হাজার টাকা জমা দিতে বলা হয়েছে।
যশোর সিটি ক্যাবল (প্রাঃ) লিঃ ২০০৩ সালে ২০ জনকে নিয়ে গঠিত হয় এবং ১৩ লাখ ৫০ হাজার শেয়ার নিয়ে যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটি যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর, খুলনা বিভাগীয় অফিস কোম্পানি আইনে রেজিষ্ট্রেশনভুক্ত হয়। কিন্তু রেজিষ্ট্রেশন পাওয়ার পর ১৯৯৪ সনের কোম্পানি আইনের ধারা ৮১(২) তৎসহ ৮৫(৩) ও ৩৯৬ ধারা অনুসারে পরিচালিত হয়নি। ২০ জন নিয়ে যাত্রা শুরুর পর আরও ৩২ জনকে অবৈধ পন্থায় শেয়ারহোল্ডার করা হয়েছে। শেয়ার কেনা-বেচার ক্ষেত্রেও মানা হয়নি কোম্পানি আইন। নিয়ম মানা হয়নি বার্ষিক সাধারণ সভা ও অডিট। অথচ টানা দুই দশকে শেয়ার দাঁড়িয়েছে ৪ কোটিতে। কিন্তু ব্যবসার প্রসার ঘটলেও সরকার সেভাবে রাজস্ব পায়নি। যা রিট মামলায় প্রমাণিত হওয়ায় হাইকোর্টের মহামান্য বিজ্ঞ বিচারক উল্লেখিত রায় দিয়েছেন।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়- যশোর সিটি ক্যাবল (প্রাঃ) লিঃ কোম্পানি আইন ও রেজিস্ট্রিশনের শর্ত ভঙ্গ করে ৩২ জনের কাছে শেয়ার বিক্রির ঘটনাও ঘটেছে। আর সেই যাত্রা থেকে শুরু। আজঅব্দি টানা প্রায় দুই দশক প্রতিষ্ঠানটিতে হয়নি আয় ব্যয়ের হিসেব বা অডিট। কোম্পানি আইন অনুয়ায়ী বার্ষিক সাধারণ সভা করা বাধ্যতামূলক হলেও যশোর সিটি ক্যাবল প্রাঃ লিঃ এসবের ধারের কাছেও ভেড়েনি। এনিয়ে খোদ প্রতিষ্ঠানে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
জানা যায়- যশোর সিটি ক্যাবল (প্রাঃ) লিমিটেডের বার্ষিক সাধারণ সভা ২০০৩-২০২৩ পর্যন্ত আইন অনুযায়ী না হওয়ায় ও তথাকথিত অবৈধ আহ্বায়ক কমিটি গঠনসহ যাবতীয় কার্যক্রম কোম্পানি আইনপরিপন্থী হওয়ায় প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মীর মোশাররফ হোসেন বিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন।
গত বছরের ৩ আগস্ট দায়েরকৃত আবেদনের কোম্পানির ম্যাটার নং-২৯২/২০২৩। আবেদনে মহামান্য বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট এর হাইকোর্ট বিভাগের নজরে আনা হয়। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৪ সনের কোম্পানি আইনের ধারা ৮১(২) তৎসহ ৮৫(৩) ও ৩৯৬ ধারা অনুসারে পরিচালিত হয়নি। আইনজীবীর বক্তব্যে সন্তুষ্ট হয়ে বিজ্ঞ বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী আবেদনটি গ্রহণ করেন। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখাকে ওই দরখাস্তের এবং আদেশ বিবাদীগণের প্রতি রেজিস্টার্ড পোস্টের মাধ্যমে জারীর নির্দেশ দেন।
১১ ডিসেম্বর রিট শুনানি শেষে মহামান্য আদালতের বিচারক কোম্পানির ২১ নং সিরিয়াল থেকে ৫২ নং পর্যন্ত শেয়ার হোল্ডারদের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেন। অভিযুক্তদের আদেশ জারির দিন থেকে পরবর্তী ৩ মাসের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আদালতে জবাব দিতে বলা হয়।
এসব অনিয়ম-দুর্নীতি এবং কোম্পানি আইনের তোয়াক্কা না করে প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা কমিটি গঠন করে যা খুশি তাই করে যাচ্ছে। অভিযুক্তরা উচ্চ আদালতের আদেশের প্রতিও দেখিয়েছেন বৃদ্ধাঙ্গুলি।
ওই বছরের ১১ আগষ্ট বরাবরের মতো কোম্পানি আইন ভেঙে প্রতিষ্ঠানটির ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন হয়। যশোর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার পার্কে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ৩০ জন ভোট দেয়। তালিকা অনুয়ায়ি ভোটার ৪২ জন। কিন্তু কোম্পানি আইন অনুয়ায়ি প্রথম গঠিত কমিটির ২০ জন বৈধ ভোটার ও শেয়ারহোল্ডার। পরবর্তীতে আইন ভেঙে যে ৩২ জনকে শেয়ারহোল্ডার করা হয়েছে তাদের কোম্পানি আইনে বৈধতা নেই। সুতরাং যাদের শেয়ার হোল্ডার বৈধ না, তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ নেই। এরআগে তারা নজিরবিহীন একটি আহবায়ক কমিটিও গঠন করে।
কথিত ওই নির্বাচনে রুহুল কুদ্দুস মুকুল চেয়ারম্যান, উত্তম কুমার চক্রবর্তী বাচ্চু ভাইস চেয়ারম্যান ও কাজী বর্ণকে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নির্বাচিত হন। কমিটির অন্যদের মধ্যে রয়েছেন- তাদের অধিকাংশই বৈধ শেয়ার হোল্ডার না।
সম্প্রতি বিজ্ঞ বিচারপতি খিজির আহমেদ চৌধুরী রায়ে উল্লেখ করেছেন- যাবতীয় কর্মকাণ্ড পর্যালোচনা করে সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয়েছে রিট আবেদনকারী কোম্পানি আইন মেনে প্রতিষ্ঠান পরিচালনার চেষ্টা করেছেন। কিন্তু অন্যান্য শেয়ার হোল্ডাররা নানা ছলচাতুরির মাধ্যমে আইন ভঙ্গ করে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে যশোর সিটি ক্যাবল (প্রাঃ) লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করে অনৈতিকপন্থায় অর্থ উপার্জন করে আসছেন। এর ফলে সরকার প্রতিবছর মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
যার প্রেক্ষিতে উপরেলিখিত নির্দেশ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন বিজ্ঞবিচারক।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, প্রতিষ্ঠানটির একাধিক শেয়ার হোল্ডার জানিয়েছেন- উচ্চ আদালতের রায় বাস্তবায়নের মধ্যদিয়ে প্রতিষ্ঠানটির আয়-ব্যয়ে যেমন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ফিরবে। তেমনি সরকার পাবে প্রতিবছর মোটা অংকের রাজস্ব। এ বিষয়ে আহবায়ক আবুল কালাম আজাদকে মুঠোফোনে কল করা হলে রিসিভ হয়নি।