1. live@www.chitrarpar.com : news online : news online
  2. info@www.chitrarpar.com : চিত্রারপাড় :
বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:০০ অপরাহ্ন

রণজিত রায়ের খপ্পরে নিঃস্ব সুশীল মাস্টার হারিয়েছেন বাগান-মাঠসহ ১০ বিঘা জমি

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: শনিবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৬৬ বার পড়া হয়েছে

বাঘারপাড়া সাবেক এমপি রণজিত কুমার রায়ের খপ্পরে পড়ে বাঘারপাড়ার আরো এক হিন্দু পরিবার নিঃস্ব হয়েছে। কৌশলে লিখে নিয়েছেন মেহগনি বাগানসহ মাঠের দশ বিঘা জমি। ছলচাতুরি করে জমির মোট মূল্যের অর্ধেকও পরিশোধ করেননি। এরপরেও খাজুরা বাজারে ৫০ লাখ টাকা মূল্যের পাঁচ শতক জমি মাত্র তিন লাখ টাকা দিয়ে জোরপূর্বক লিখে নিয়েছেন।

নিঃস্ব হওয়া পরিবার প্রধানের নাম সুশীল কুমার মল্লিক। এলাকার মানুষ রণজিত কুমার রায় সুশীল মাস্টার নামেই চেনে। তিনি খাজুরার রণজিত রায়ের খপ্পরে এমএন মিত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। টাকা আর সম্পদের কথা ভেবেই অবসরের মাত্র পাঁচ দিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়। সুশীল মাস্টারের বাড়ি বাঘারপাড়ার বন্দবিলা ইউনিয়নের চাপাতলা গ্রামে।

দরিদ্র পরিবারের সুশীল কুমার মল্লিক অনেক কষ্ট করে লেখাপড়া শেষ করে খাজুরা এমএন মিত্র মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা শুরু করেন। বিয়ে করেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের মেয়ে অনীমা রাণীকে। তিনিও এক সময় সরকারি চাকরিতে (পরিবার পরিকল্পনা বিভাগ) যোগ দেন। দুজনে আয় করতেন বলেই সংসারে কোনো অভাব ছিল না। সুশীল মাস্টারের নেশা ছিল জমি কেনা। পৈত্রিক সম্পত্তি বাদেও তিনি মাঠে ১০ বিঘা জমি কেনেন। এক সময় তিনি খাজুরা বাজারেও পাঁচ শতক জমি কিনে ফেলেন। কখনও তিনি নগদ টাকা জমিয়ে রাখতেন না। ব্যক্তি জীবনে সুশীল মাস্টার দুই ছেলে এ এক মেয়ের জনক ছিলেন। সুশীলের বড় ভাই সন্ন্যাসী মল্লিক ছিলেন রনজিত কুমার রায়ের বাল্যবন্ধু। সেই সুবাদে রণজিত রায়ের সাথে তার একটা সম্পর্ক ছিলো। চাপাতলা গ্রামের পার্শ্ববর্তী মাঠে রণজিত কুমার রায়ের পৈত্রিক সম্পত্তি থাকায় এ গ্রামের মানুষের সাথে তার নিবিড় সম্পর্কও ছিলো। সুশীল মাস্টারের মেয়ে রিতা মল্লিক জানিয়েছেন, বড় ভাই সুব্রত মল্লিক একসময় ভারতে

বসবাস শুরু করেন। ছোট ভাই সুকান্ত মল্লিক লেখাপড়া করতেন। তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আমার বিয়ের কথা পাকা হয়। ছেলে পক্ষকে মোটরসাইকেল দিতে হবে। বাবার নেশা ছিলো কিছু টাকা জমলেই তিনি জমি কিনতেন। হঠাৎ করে বিয়ের খরচ ও মোটরসাইকেলের টাকার জন্য দুশ্চিন্তায় পড়েন। এ সময় রণজিত রায় অনেকটা উপযাজক হয়েই বাবাকে দুই লাখ টাকা দেয়। বাবাও সেটা গ্রহণ করেন। আমার বিয়ের পর বাবাকে রনজিত রায় ওই টাকা ফেরত দিতে চাপ দেয়। বাবা তখন সিদ্ধান্ত নেন বাগানের মেহগনি গাছগুলো বিক্রি করার। পাশের সেকেন্দারপুর গ্রামের কৃষ্ণপদ হালদার ওরফে কেস্ট মধ্যস্থতা করে গাছগুলো রনজিত রায়ে কাছে বিক্রি করার। এক সময় বাবা বাগানের সব গাছ রণজিত রায়কে দিয়ে দেন। বিনিময়ে আগে নেওয়া ধারের দুই লাখ টাকা পরিশোধ করেন। বড় ভাইয়ের চাপে এক সময় বাবা সিদ্ধান্ত নেন অবসরের পর ভারতে চলে যাবেন। জায়গা-জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। অনেক খরিদ্দারের সাথে বাবার কথা চলতো। এ সময় কৃষ্ণপদ হালদারের হুমকি-ধামকিতে সব খরিদ্দার সরে যেতে থাকে। এক সময় বাবা বাধ্য হয়েই রনজিত রায়ের কাছেই বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। বাগান ও মাঠের ১০ বিঘা জমিই রনজিত রায়কে লিখে দেন বাবা। মোট টাকার অর্ধেকও পাননি বাবা। এরপর রনজিত রায় কৌশল করেন খাজুরা বাজারের পাঁচ শতক জমি সরকারের নামে লিখে দিতে হবে। সেখানে পোস্ট অফিস হবে। জমি অন্যত্র বিক্রি চেষ্টা করেও ব্যার্থ হন বাবা। বাধ্য হয়ে আবার রণজিত রায়ের প্রস্তাব মানতে হয়। ৫০ লাখ টাকার জমি মাত্র তিন লাখ টাকা দিয়ে জোর করে লিখে নেন সাবেক এমপি রনজিত। বাবা সব সময় জমি ও টাকার চিন্তাই এক সময় দিশেহারা হয়ে পড়েন। জনশ্রুতি রয়েছে, খাজুরা বাজারের জমি লিখে নেওয়ার সময় রণজিত রায় নিজেই সুশীল মাস্টারকে চড়-থাপ্পর মারেন। তবে এ বিষয়ে তার পরিবারের বা মেয়ে রিতা কিছু বলতে চাননি।

সুশীল মাস্টার এলাকায় খুব নিরীহ মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। জীবদ্দশায় তিনি বিদ্যালয়, শিক্ষার্থী আর পরিবার ছাড়া অন্য কিছু বুঝতেন না। ২০১৭ সালের ২ ফেব্রুয়ারি স্বরসতী পূজার দিন ছিলো। সুশীল মাস্টার স্কুলে যাওয়া-আসা করতেন বাইসাইকেলে। এদিন তিনি স্কুলে পূজা করবেন বলে একটু সকালেই বাইসাইকেলযোগে বাড়ি থেকে বের হন। যশোর-মাগুরা সড়কের ভাটার আমতলায় তিন দুর্ঘটনার শিকার হন। আর মাত্র পাঁচদিন পরেই তার অবসরে যাওয়ার কথা ছিলো।

রিতা মল্লিক আরো বলেন, বাবা জীবিত থাকা অবস্থায় তিনি সবাইকে জানিয়েছিলেন তার শেষকৃত্য যেনো গঙ্গা পাড়েই হয়। বাবার শেষ ইচ্ছা পূরণের জন্য দুর্ঘটনার পরপরই তাকে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সযোগে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভারতের একটি হাসপাতালে ১৯ ফেব্রুয়ারি বাবার মৃত্যু হয়। গঙ্গাপাড়েই বাবার শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। বাবার শোকে মা অবসরের তিন বছর আগেই চাকরি ছেড়ে দেন। তিনি এখন খুব অসুস্থ। চিকিৎসার জন্য বেশিরভাগ সময় তিনি ভারতেই থাকেন। মাঝেমধ্যে এ দেশে এসে মামার বাড়িতে থাকেন। একটি সূত্র জানিয়েছে, সুশীল মাস্টারের ছোট ছেলে সুকান্ত মল্লিক চাপাতলাতেই বসবাস করতে চেয়েছিলেন। এক সময় ভারত থেকে এসে বাড়িতে বসবাস শুরু করেন। কিন্তু রণজিত রায়ের পেটোয়া বাহিনীর সদস্য রুবেল, কৃষ্ণপদ ও লিন্টুর উৎপাতে সেখানে আর বসবাস করতে পারেননি। বাধ্য হয়েই শেষ সম্বল ভিটেবাড়িও বিক্রি করতে হয়। তবে এসব বিষয়ে সুশীল মাস্টারের ভাই সন্ন্যাসী মল্লিক ও তার ছেলেরা এবং রিতা মল্লিকও কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

উল্লেখ্য, কৃষ্ণপদ হালদার ওরফে কেস্টর ষড়যন্ত্রে সুশীল মাস্টার নিম্ব হয়েছেন। সেই কৃষ্ণপদও কিছুদিন আগে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট