বুধবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১০:২১ পূর্বাহ্ন
আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি নিয়ে শিগগিরই রাজপথে নামছে বিএনপি। যুগপৎভাবে সরকারবিরোধী কর্মসূচি নিয়ে রাজপথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে দলটি। আন্দোলনের কর্মসূচি কি হবে তা চ”ড়ান্ত করতে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন বিএনপির নীতি নির্ধারকরা।
যুগপৎ শরিকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের পাশাপাশি দলের নেতাদেরও মতামত নেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, দুর্নীতিবিরোধী প্রচার এবং ভারতের সঙ্গে অসম চুক্তিসহ জনসম্পৃক্ত ইস্যুতে শিগগিরই কর্মসূচি দিয়ে রাজপথে নামার তাগিদ দিয়েছেন দল ও জোটের নেতারা।
এক্ষেত্রে ইস্যুভিত্তিক কর্মসূচি হিসেবে সমাবেশ, রোডমার্চ, লংমার্চ কর্মসূচি গ্রহণ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ঢাকাসহ ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশ ও জাতীয় সংলাপ করার প্রস্তাবও এসেছে। ভারতের সঙ্গে সমঝোতা অনুযায়ী বাংলাদেশের যে অঞ্চলের ওপর দিয়ে ট্রেন চলার কথা যেসব স্থানে বিক্ষোভ মিছিল এবং কালো পতাকা প্রদর্শন কর্মসূচি দেয়ার আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি জেলা এবং উপজেলা পর্যায়েও কর্মসূচি হাতে নিতে বলা হয়। লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ, পদযাত্রা, লংমার্চ, রোডমার্চসহ একগুচ্ছ কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নামার বিষয়টিও বিএনপির নীতি নির্ধারকরা বিবেচনা করছেন। চলতি সপ্তাহ কিংবা আগামী সপ্তাহে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হতে পারে।
আগামীদিনের আন্দোলন কর্মসূচি চ”ড়ান্ত করতে বিএনপির শীর্ষ নেতারা গত কয়েকদিন ধরে যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দল ও জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করেছেন। গতকাল সোমবার বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ ও গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এরআগে গত ১১ জুলাই গণফোরাম ও পিপলস পার্টি, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, এনডিএম, ১২ জুলাই এলডিপি, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট বাংলাদেশ লেবার পার্টি এবং ১৩ জুলাই গণ-অধিকার পরিষদের (নূর), ১৪ জুলাই ১২ দলীয় জোটের সঙ্গে পৃথক বৈঠক করেছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবে আজ গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের কার্যালয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
এছাড়াও গত শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টন কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দলটির অঙ্গ-সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে বৈঠকে করেছেন বিএনপির নীতি নির্ধারকরা। ওই বৈঠক বিকাল পাঁচটা থেকে সš্যা ৭টা পর্যন্ত চলে। এতে ভার্চুয়ালি লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান অংশ নেন। এ ছাড়া বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও ভার্চুয়ালি অংশ নেন। এর বাইরে স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এবং আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। ওই বৈঠকের পর দ্বিতীয় দফায় যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং দলটির অঙ্গ-সংগঠনের কেন্দ্রীয় সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকরা নিজেরা সম্ভাব্য কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেন।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এমন কয়েকজন নেতা জানান, বৈঠকে কেউ কেউ এক মাসের কর্মসূচি নিয়ে কর্ম-পরিকল্পনা ঠিক করার পরামর্শ দেন। তবে বেশির ভাগ নেতা ৩ মাসের কর্মসূচি রোডম্যাপ করার পরামর্শ দেন। তবে কতদিনের কর্মসূচি দেয়া হবে তা এখনো ঠিক হয়নি। স্থায়ী কমিটির বৈঠকেই এটা চ”ড়ান্ত হবে। বিএনপি নেতারা জানান, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি, দুর্নীতিবিরোধী প্রচার, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্বির প্রতিবাদ, ভারতের সঙ্গে করা চুক্তি ও সমঝোতা ইস্যু, সীমান্ত হত্যা, গ্যাস এবং পানির দাম বৃদ্বির প্রতিবাদে বিভিন্ন কর্মসূচির প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এসব ইস্যুতে কয়েকজন নেতা সভা-সেমিনার করার প্রস্তাব দেন। কিন্তু বেশির ভাগ নেতাই বিভাগীয় সমাবেশ, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে সমাবেশ, লিফলেট বিতরণ, গণসংযোগ, পদযাত্রা, লংমার্চ এবং রোডমার্চ কর্মসূচির প্রস্তাব দিয়েছেন।
ওদিকে যুগপৎ আন্দোলনের কর্মসূচি নির্ধারণে সমমনা দল ও জোটের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠক করছেন বিএনপির শীর্ষ নেতারা এসব বৈঠকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, নজরুল ইসলাম খান, বেগম সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু ও মোহাম্মদ শাহজাহান উপস্থিত থাকছেন। এসব বৈঠকে যুগপৎ দল ও জোটের নেতারা কর্মসূচির বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাব ও পরামর্শ দিয়েছেন। আরও দলকে যুগপৎ আন্দোলনে নেয়ার পরামর্শও দেয়া হয়েছে। জানা গেছে, বৈঠকে জামায়াত এবং ইসলামী দলসহ সরকারবিরোধী আরও কয়েকটি রাজনৈতিক দলগুলোকে যুগপৎ আন্দোলনে নেয়ার জন্য বিএনপিকে পরামর্শ দিয়েছেন শরিক দলের নেতারা। পাশাপাশি তারা রোডমার্চ, লংমার্চ, সমাবেশ এবং অবরোধসহ বেশকিছু কর্মসূচিরও পরামর্শ দেন। তবে কর্মসূচি এখনো ঠিক হয়নি। যুগপৎ দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক শেষে আবারও তাদের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বসে চ”ড়ান্ত কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান মানবকণ্ঠকে বলেন, এখনো কোনো কর্মসূচি নির্ধারণ করা হয়নি। এখন মতামত নেয়া হচ্ছে। সব মতামত নেয়ার পরে কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে। তবে খুব শিগগিরই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। তিনি বলেন, কি করলে দেশের মানুষের সংকট সমাধানে আমরা আমাদের ভ”মিকা পালন করতে পারি, সেটা নিয়ে আমরা বৈঠকে আলোচনা ও কথা বলেছি। এরমধ্যে বেশকিছু প্রস্তাব ও পরামর্শ দিয়েছেন নেতৃবৃন্দরা। স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আগামী দিনের কর্মসূচি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। এই অবৈধ সরকার অপসারণের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল, সেই চলমান আন্দোলনকে আরও গতি সৃষ্টি করার জন্য- সেই আন্দোলনকে সফল সমাপ্তির দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা আলোচনা করেছি। কর্মসূচি কি হবে তা পরবর্তীতে ঠিক করা হবে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, দেশের স্বার্থ হানিকর চুক্তি-সমঝোতা করা হচ্ছে। সীমান্ত মানুষ হত্যা হচ্ছে, অরক্ষিত থাকছে, নানা কারণে আমরা মনে করি যে, একদফার দাবিতে আমরা লড়াই শুরু করেছি- ওই একদফা বাস্তবায়ন ছাড়া সংকটের সমাধান হবে না। আর সেই একদফার যে লড়াই, সেই লড়াইকে এগিয়ে নিতে আগামীদিনে কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
