ময়মনসিংহের ভালুকায় মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যাওয়া নারীর শিশু সন্তান মেহেদী হাসান ওরফে জায়েদকে তার মামার জিম্মায় দিতে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট।
সোমবার বিচারপতি এম আর হাসান ও বিচারপতি ফাহমিদা কাদের চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
৯ মে দিনগত রাত আনুমানিক ৩টার দিকে স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় ওই শিশু ও তার মা সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন। তবে কীভাবে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা জানা যায়নি। পরে ৯৯৯ কল পেয়ে পুলিশ ওই শিশু ও তার মাকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে ভালুকা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে চিকিৎসক তাদের ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে মা মারা যান।
মা হারা এই শিশুটির চিৎকারে পরিবেশ ভারি হয়ে যাওয়ায় ঘটনাটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে নেটিজেনদের হৃদয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। পরে শনিবার (১১ মে) রাত ১১টায় ভালুকা হাইওয়ে থানার পুলিশের কর্মকর্তা মো. বাবুল হোসেন গণমাধ্যমকে জানান, সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত মা ও বেঁচে যাওয়া শিশুর পরিচয় মিলেছে। মায়ের নাম জায়েদা (৩২)।
তিনি সিলেট সুনামগঞ্জ জেলার দুয়ারা উপজেলার খুশিউড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. রমিজ উদ্দিনের মেয়ে। বেঁচে যাওয়া দেড় বছর বয়সী শিশুটির নাম জাহিদ হোসেন।
এই পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, কাপাসিয়া উপজেলার কাপাসিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. ফারুক মিয়ার সঙ্গে নিহত জায়েদার দ্বিতীয় বিয়ে হয়। ফারুক স্থানীয় বাসিন্দা কফিল উদ্দিনের ছেলে। ফারুকের ঘরে প্রথম স্ত্রীসহ তিনটি সন্তান রয়েছে। যে কারণে জায়েদার বিয়ে মেনে নেয়নি ফরুকের পরিবার। ফলে স্বামীর যোগাযোগ না থাকায় স্কয়ার মাস্টারবাড়ি এলাকায় শিশু জাহিদকে নিয়ে বসবাস করতেন জায়েদা। ধারণা করা হচ্ছে, ঘটনার দিন রাতে তিনি রাস্তা পারাপার হতে গিয়ে এ দুর্ঘটনার শিকার হন।
নিহত জায়েদার বড় ভাই মো. রবিন মিয়া জানিয়েছেন, ফেসবুকের মাধ্যমে জায়েদার মৃত্যুর খবর পান তারা। বতর্মানে শিশুটিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
বিষয়টি আদালতের নজরে আনেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। তিনি জানান, আদালত বিবেচনায় আদেশ দিয়েছেন।
এ বিষয়ে ভালুকায় দায়ের করা মামলাটি সঠিকভাবে তদন্ত করে দায়ী গাড়ি শনাক্ত এবং সংশ্লিষ্টদের গ্রেপ্তার করতে ময়মনসিংহের পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় তথ্যসহ অগ্রগতি প্রতিবেদন আগামী ২০ মে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ডিআইজি বিষয়টি তদারকি করবেন। র্যাবের ডিজি আসামি গ্রেপ্তারের জন্য ব্যবস্থা নেবেন। ভিন্ন কোনো দাবি না থাকায় শিশুটির তত্ত্বাবধান ও হেফাজতের জন্য তার মামার কাছে অস্থায়ীভাবে হস্তান্তরের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। শিশুটির উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে। শিশুটির অভিভাবকত্ব নিয়ে সংশ্লিষ্ট আদালতে আবেদন দাখিল ও নিষ্পত্তি করতে বলা হয়েছে।