1. live@www.chitrarpar.com : news online : news online
  2. info@www.chitrarpar.com : চিত্রারপাড় :
শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৪ পূর্বাহ্ন

শ্মশানের জায়গা নিয়েও হিন্দুদের সাথে প্রতারণা করেছেন রনজিত জমি কিনেছেন নিজ নামে

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: শনিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪
  • ৩৯ বার পড়া হয়েছে

এমন কোন সেক্টর নেই যেখানে দুর্নীতি ও প্রতারণা করেননি যশোর-৪ আসনের সাবেক এমপি রনজিৎ কুমার রায়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একক নিয়োগ বাণিজ্য, প্রতারণা করে হিন্দুদের জমি দখল, ভুয়া প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থ লোপাট, ভুয়া নামে ঐচ্ছিক তহবিল হজম, উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে মনোনয়ন বাণিজ্য ইত্যাদি ছিল রণজিৎ রায়ের আয়ের প্রধান উৎস। এত সব দুর্নীতি করেও রণজিত রায় থেমে থাকেননি। হিন্দুদের সাথে শ্মশানের জায়গা নিয়েও তিনি প্রতারণা করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খাজুরা বাজারের পাশের সাতটি গ্রামের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা ধান্যপুড়া শ্মশানে মৃতের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করতেন। গ্রামগুলো হচ্ছে ধর্মগাতি, পার্বতীপুর, চন্ডিপুর, ধান্যপুড়া, মথুরাপুর, তেলিধান্যপুড়া ও পান্থাপাড়া। শাশানের নামে নিজস্ব কোন জায়গা ছিলো না। ধান্যপুড়া গ্রামে চিত্রা নদীর পাড়েই ছিলো সাত গ্রামের হিন্দুদের শেষ আশ্রয়স্থল। এক সময় নদীর পাড়ে জায়গা সংকটের কারণে পাশের জমিতেই মৃতের শেষকৃত্য করতে থাকে। এসব জমি মুসলমানদের হওয়ায় এক সময় বিপত্তি দেখা দেয়। ২০১৮ সালে রনজিত রায় তৃ তীয় মেয়াদে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর পরই হাতে নেন শশ্মশান বাণিজ্য। শ্মশানের নামে জমি কেনার ধুয়ো তোলেন। মাঝে মধ্যে খাজুরা বাজারে বসেই বিত্তশালী হিন্দুদের জড়ো করে শাশানের প্রসঙ্গ উঠাতেন। এ সব আসরে বিত্তশালী মুসলিমকেও ডাকা হতো। কে কত টাকা দিতে পারবে তার ডাক উঠানো হতো আসরে। এক সময় সিদ্ধান্ত হয় শ্মশানের পাশের জমি কেনার।

শাশানের পাশের জমির মালিক হচ্ছেন মথুরাপুরের কাজী কলিমউদ্দীন ও তার বেয়াই একই গ্রামের আল আমীন মন্ডল। কাজী কলিমউদ্দীন শ্মশানের নামে জমি বিক্রি করতে রাজি না হওয়ায় ঘটে বিপত্তি। কলিমউদ্দীনের মৃত্যুর পর বিষয়টি আবার আলোচনার সামনে আসে। রনজিত রায়ের চাপ প্রয়োগে এক সময় কলিমউদ্দীনের ছেলে মেয়েরা শ্মশানের নামেই জমি লিখে দিতে রাজি হন। শুরু হয় রনজিত রায়ের টাকা উঠানো। সাত গ্রামের প্রতি পরিবারের কাছ থেকে সর্ব নিম্ন পাঁচ হাজার থেকে এক লক্ষ পর্যন্ত টাকা উঠানো হয়। ওই গ্রামগুলোতে চার শতাধিক হিন্দু পরিবার রয়েছে। খাজুরা বাজারে রনজিত রায়ের বাড়ির নীচ তলায় জুয়েলারি ব্যবসা করেন মথুরাপুর গ্রামের অসীত সরকার। তিনি জানান, এমপি বাবুর অনেক চাপাচাপিতে আমি এক শতক জমির মূল্য বাবদ ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম। আমার গ্রামের নিত্যনন্দও ৪০ হাজার টাকা দিয়েছিলো। পরে শুনেছি জমি রনজিত রায়ের নিজের নামে নিয়েছেন। রাগ, ক্ষোভ, ভয় আর অনুশোচনায় কিছু বলতে পারিনি। অনেক কষ্ট করেই টাকাটা দিয়েছিলাম। আমার বাবা, মা ওই শ্মশানেই শুয়ে আছে। তাদের আত্মার শান্তির জন্য টাকাটা দিয়েছিলাম। এমন প্রতারণা সৃষ্টিকর্তা সহ্য করবেন না’।

চন্ডিপুরের উত্তম বিশ্বাস দিয়েছেন ২০ হাজার টাকা। তিনি জানান, তার মত করে কমপক্ষে শতাধিক ব্যক্তি ২০ হাজার করে টাকা দিয়েছে। মালেশিয়া প্রবাসি ধর্মগাতির উজ্জ্বল দিয়েছে এক লক্ষ টাকা। খাজুরা অঞ্চলে একটু বিত্তশালী হিন্দু পরিবার হলে আর রক্ষা নেই। তাকে দিতে হয়েছে এক শতক জমির মূল্য বাবদ ৪০ হাজার টাকা। অথচ প্রতি শতক জমির মূল্য দেওয়া হয়েছে ২৩ হাজার টাকা। উত্তম বিশ্বাস ক্ষোভের সাথে বলেন, যা হবার হয়েছে, তার পরেও যদি জমিটা শশ্মশানের নামে নিতো তাহলে কোন দুঃখ থাকতো না।খাজুরা হাট ব্যবসার সাথে জড়িত কৃষ্ণনগরের মোজাহের শেখ। তিনি জানান, তারা কয়েকজন মিলে খাজুরা, ভাটা ও পুলের হাট ইজারা নিয়েছেন। তাদের কাছ থেকেও শশ্মশানের জমি কেনা বাবদ ৪০ হাজার নিয়েছেন রণজিত রায়। গণমাধ্যমকর্মী মথুরাপুরের

জীবন আচার্য জানিয়েছেন, তিনি এক শতকের মূল্য বাবদ ৪০ হাজার টাকা দিয়েছেন। জীবন আচার্যের মামা একই গ্রামের জয়দেব আচার্য ঢাকায় একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। তিনিও এক শতক জমির মূল্য হিসাবে ৪০ হাজার টাকা দিয়েছেন। জীবন ক্ষোভের সাথে জানান, রণজিত রায় পরপর তিনবারের এমপি। তাকে সবাই ভয় পেত। শ্মশান হচ্ছে হিন্দুদের আবেগের জায়গা। রণজিত রায় সেই আবেগকে ব্লাকমেইল করে টাকা আদায় করেছেন। অনেকেই হয়রানির ভয়ে টাকা দিয়েছেন। জমি দলিল হওয়ার পর সবাই যখন জানতে পারে শ্মানের নামে দলিল না হয়ে রণজিত রায়ের নিজের নামে দলিল হয়েছে, তখন এ অঞ্চলের সব ধর্মের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। উপজেলা নির্বাচনে তার ছেলে রাজিব রায়ের বিপর্যয়ের এটিও একটি কারণ। খাজুরা অঞ্চলে রণজিত রায়ের অন্যতম হাতিয়ার লেন্টু রায়ের কাছ থেকে শুনেছি উপজেলা নির্বাচনের পর রণজিত রায় জমি শ্মশানের নামে ফিরিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। ভোট হওয়ার পর এ বিষয়ে আর কোন আলোচনা হয়নি। শ্মশানের জায়গা রণজিত রায়ের নামে বলেই মৃত্যুর পর এলাকার অনেকের শেষকৃত্য এখানে না হয়ে যশোরের নীলগঞ্জে হয়েছে। জীবন আচার্যের ধারণা, জমির মালিক যে টাকা পেয়েছে তার পাঁচ গুণ টাকা আদায় করা হয়েছে। গত ১৫ বছরে এ শ্মশানের নামে প্রতি বছর ভুয়া প্রকল্প বানিয়ে রণজিত রায় কামিয়ে নিয়েছেন কোটি টাকার উপরে।

জমিদাতা খাজুরা আলীম মাদ্রাসার শিক্ষক কাজী কামরুল ইসলাম জানান, তার পিতা কাজী কলিমউদ্দীন জীবিত থাকাকালীন সময়ে জমি শ্মশানের নামে বিক্রি করতে রাজি হননি। বাবার মৃত্যুর পর আমার মা ও আট ভাই বোন মিলে সিদ্ধান্ত নিই ৪৬ শতক জমি শ্মশানের নামে লিখে দিবো। আমরা রাজি হওয়ার কারণে আমার শ্বশুর ধান্যপুড়া গ্রামের আল আমীন মন্ডল তার ৩১ শতক জমি দিতে রাজি হন। সাবেক এমপি রনজিত কুমার রায়ের সাথে জমির চূড়ান্ত মূল্য নির্ধাণ হয় প্রতি শতক ২৫ হাজার টাকা। তবে টাকা পরিশোধের সময় আমাদেরকে চেপে ধরে ২৩ হাজার করে দিয়েছেন। সেই হিসাবে আমরা মোট টাকা পেয়েছি ১০ লক্ষ ৫৮ হাজার টাকা। আর আমার শ্বশুর পেয়েছে সাত লক্ষ ১৩ হাজার টাকা। হিসাব মতে ৭৭ শতক জমির মোট মূল্য ১৭ লক্ষ ৭১ হাজার।

বাঘারপাড়া উপজেলা সাবরেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানাগেছে, ৩৫ নং ধান্যপুড়া মৌজায় ১৪৩ দাগের সাত শতক ও ১৩৭ দাগের ২৪ শতক মোট ৩১ শতক জমি গত ২০২০ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর আল আমীন মন্ডলের ছয় ওয়ারিশ রণজিত রায়ের নামে লিখে দেন। যার দলিল নং ৩৭৪৮। দলিলে জমির মূল্য দেখানো হয়েছে এক লক্ষ টাকা। একই মৌজার ১৩৬ নং দাগের ৪৬ শতক জমি ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর কাজী রবিউল ইসলাম ও তার মা’সহ বাকি সাত ভাই বোন রণজিত কুমার রায়ে নামে লিখে দিয়েছেন। দলিলের নং ৪৩৬৭। দলিলে জমির মূল্য দেখানো হয়েছে এক লক্ষ ৪৪ হাজার। দুইটি দলিলে মোট মূল্য দেখানো হয়েছে দুই লক্ষ ৪৪ হাজার। রণজিত কুমার রায় এখানেও প্রতারণ করে জমির মূল্য কম দেখিয়ে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়েছেন। জমির ক্রয় মূল্যের উপর সরকার রাজস্ব পায় প্রায় আট শতাংশ। সেই হিসাবে দুই লক্ষ ৪৪ হাজার টাকার আট শতাংশ হারে সরকার রাজস্ব পেয়েছে মাত্র ১৯ হাজার পাঁচশত ২০ টাকা। আর দলিলে যদি প্রকৃত মূল্য ১৭ লক্ষ ৭১ হাজার টাকা দেখানো হতো তাহলে সরকারের রাজস্ব আয় হতো এক লক্ষ ৪১ হাজার ছয়শত ৮০ টাকা। হিসাব মতে দুইটি দলিলে সরকারকে এক লক্ষ ২১ হাজার

একশত ৬০ টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া হয়েছে।শ্মশান কমিটির সভাপতি স্বপন সরকার জানিয়েছেন, ‘আমি নামে মাত্র সভাপতি। টাকা পয়সা উঠানো, জমি দলিল ইত্যাদি সবই করেছে শশ্মশান কমিটির সাধারণ সম্পাদক লেন্টু রায়। দলিল হওয়ার দিন আমি ছিলাম না। বিষয়টি নিয়ে আমারও ক্ষোভ, অসন্তোষ আছে। এর বাইরে আমার আর কিছুই বলার নেই’। উল্লেখ্য গত ৫ আগস্টের পর থেকে লেন্টু রায় পলাতক রয়েছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০৩১  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট