জেলা প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগকে কেন্দ্র করে চলতি মাসের শুরুতে সচিবালয়ে হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা হয়। এ ঘটনায় ১৭ জন উপসচিবকে শাস্তির সুপারিশ করেছে গঠিত তদন্ত কমিটি। সোমবার বিকেলে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এ তথ্য জানিয়েছেন।
মোখলেস উর রহমান বলেন, জেলা প্রশাসক নিয়োগকে কেন্দ্র করে গত ১০ সেপ্টেম্বর সচিবালয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলা করেন উপ-সচিব মর্যাদার কর্মকর্তারা। সেদিনের ঘটনায় বিশৃঙ্খলার দায়ে ১৭ জনকে চিহ্নিত করেছে গঠিত তদন্ত কমিটি। তাঁদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকার বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এদের মধ্যে আটজনকে গুরুদণ্ড, চারজনকে লঘুদণ্ড ও পাঁচজনকে তিরস্কার করার সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব বলেন, ১৭ জন কর্মকর্তার সকলেই উপসচিব পদমর্যাদার। তবে তিনি কর্মকর্তাদের কারও নাম প্রকাশ করেননি। নাম জানার দরকার নেই বলেও জানান তিনি।
সম্প্রতি দেশের ৫৯ জেলায় নতুন জেলা প্রশাসক নিয়োগ দেয় অন্তর্বর্তী সরকার। বঞ্চিতের অভিযোগ তুলে সচিবালয়ে হট্টগোল ও হাতাহাতি করেন একদল কর্মকর্তা। তাঁরা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব কে এম আলী আযমের কক্ষে গিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তাঁরা যুগ্ম সচিবের বিরুদ্ধে এককভাবে ডিসি নিয়োগের তালিকা তৈরির অভিযোগ আনেন। এ সময় তারা নিজেদের বিএনপি-জামায়াতপন্থী ‘বঞ্চিত’ কর্মকর্তা উল্লেখ করেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের অধিকাংশই হাসিনা সরকারের সুবিধাভোগী। আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমে এ কর্মকর্তাদের ডিসি নিয়োগ করা হয়েছে এমন দাবি নিয়ে দিনভর সচিবালয়ে চলে হট্টগোল।
মুখলেস উর রহমান বলেন, সচিবালয়ে অসন্তোষের ঘটনায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সিনিয়র সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা থেকেও সাক্ষী-প্রমাণ ও প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। ওই ঘটনায় তদন্ত কমিটি ১৭ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। তিন ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছেন। তাদের মধ্যে আটজনের বিষয় বলা হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করে গুরুদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। চারজনের বিষয়ে বলা হয়েছে, তদন্ত সাপেক্ষে বিধি-বিধান অনুযায়ী লঘুদণ্ড দেওয়া যেতে পারে। আর পাঁচজনের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তাঁদের শাস্তি তিরস্কার দেওয়া যেতে পারে। তবে ভবিষ্যতে যাতে এটি না করে সে ব্যাপারে সাবধান করতে হবে।
তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানিয়ে সচিব বলেন, ডিসি হতে না পারায় মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আন্দোলনের বিষয়টি কেউ ভালোভাবে নেয়নি। প্রশাসনের শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে বলেছেন অনেকে। শৃঙ্খলা রক্ষার্থে যা যা করণীয় সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জনপ্রশাসনের এই সচিব বলেন, ২০১৮ সালের সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খলা ও আপিল) বিধিমালা অনুযায়ী গুরু এবং লঘুদণ্ড দেওয়ার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জড়িত কারও বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন যুগ্ম সচিব ছিলেন, তাকে সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার করে বদলি করা হয়েছে।