বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে যশোরে বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। শুক্রবার সকাল থেকে শনিবার বিকেল পর্যন্ত যশোরে ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে যশোরের অনেক নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। টানা বর্ষণে দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয় ও জলাবদ্ধ এলাকার মানুষ।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ জানান, বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টিপাত হচ্ছে। বৃহস্পতিবার থেকেই যশোরে বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। কখনো ভারী, কখনো হালকা বৃষ্টিপাত রাতে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে শনিবার বিকেল ৬টা পর্যন্ত যশোরে ১০৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এরমধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় (শুক্রবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে শনিবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত) যশোরে সর্বোচ্চ ৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। বৃষ্টিপাতের এই ধারা অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস রয়েছে।
এদিকে, অব্যাহত এই বৃষ্টিপাতে যশোরের অনেক নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ বৃষ্টিতে নেমে এসেছে শীত। সেই সাথে বৃষ্টির কারনে শহরের অধিকাংশ জায়গা তলিয়ে যাওয়ায় দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়। মানুষ একপ্রকার ঘরবন্দি হয়ে পড়ে। অতি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বাইরে বের হয়নি। কুক্রবার সকাল হতে শনিবার রাত পর্যন্ত বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। অবিরাম বৃষ্টিতে খড়কী এমএম কলেজ দক্ষিণ গেট, আসাদ হলের সামনে, চোরমারা দীঘির পাড়, ফায়ার সার্ভিস অফিস মোড়, চারখাম্বা, বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক মোড়, বেজপাড়া চোপদারপাড়া, কবরস্থান পাড়া, তালতলার মোড়, শংকরপুর জমাদ্দার পাড়া, বারান্দিপাড়া, ষষ্ঠিতলার নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যায়। এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়ায় এলাকাবাসিকে পানির মধ্যদিয়ে চলাচল করতে হয়েছে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, পৌরসভা থেকে সঠিকভাবে ড্রেন পরিষ্কার না করার কারনে যখনই বৃষ্টি হয় তখনই এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। শহরের শংকরপুর বটতলা এলাকার বাসিন্দা লিটন হোসেন জানান, তাদের এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আগে ড্রেনের মাধ্যমে এই পানি হরিণার বিলে নেমে যেতো। এখন সেখানে বড় বড় বিল্ডিং হওয়ায় ড্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। পানি নামতে পারছে না। কিন্তু শহরের পানি এই এলাকায় এসে জমা হচ্ছে।
একই এলাকার বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম বলেন, আগে শহরের পানি হরিণার বিল দিয়ে মুক্তেশ্বরী নদীতে যেত। কিন্তু ২০১০ সালে হরিণার বিলে মেডিকেল কলেজ হওয়ার পর আশপাশে আরো অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এতে বিল দিয়ে পানি আগের মতো নিষ্কাশিত হতে পারছে না। ফলে এই এলাকা বৃষ্টি হলেই তলিয়ে যাচ্ছে।
শহরের খড়কির শাহ আবদুল করিম সড়কের সরকারি মাইকেল মধুসূদন (এমএম) কলেজের দক্ষিণ গেট থেকে খড়কি মোড় হয়ে পীরবাড়ি, কবরস্থান পর্যন্ত হাঁটু সমান পানি জমেছে। খড়কি দক্ষিণপাড়া-পশ্চিমপাড়া হাজামপাড়া, খড়কি রেললাইন পাড়ার বাসিন্দাদের বাড়ির উঠানে হাঁটু পানি। এই সড়কে চলাচলকারী রিকশা, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাসের যাত্রীদের বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে। আবার এই পানির মধ্যে দিয়ে রিকসা, ইজিবাইক যেতে রাজী না হওয়ায় অনেককে পায়ের জুতা হাতে নিয়ে হেঁটে চলাচল করতে দেখা যায়। বেজপাড়া কবরস্থান এলাকার বাসিন্দা ফিরোজ আহমেদ জানান, তাদের এলাকার ড্রেন উপচে নোংরা পানি রাস্তায় থৈ থৈ করছে। অনেকের বাড়ি ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে। ড্রেনগুলো পরিস্কার না করায় বৃষ্টির পানি নিস্কাশন হচ্ছে না। এজন্য পানি নামতে না পারায় গোটা এলাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে, দিনভর বৃষ্টির কারণে রাস্তায় যানবাহন ও মানুষের চলাচল কম ছিল। তারপর সকাল থেকে চলছে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টি। বৃষ্টির কারণে ফুটপাতের দোকানিরা পড়েছেন বিপাকে। মার্কেটে লোকসংখ্যাও কম থাকায় বিপণিবিতান গুলোতে নেই কোন ক্রেতা। রিকশা-ভ্যানচালকরা পর্যাপ্ত ভাড়া না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন। নিম্নচাপে সৃষ্ট কালোমেঘ আর দিনভর বৃষ্টির কারণে শহরের কোথাও কোথাও সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। ফলে বিভিন্ন সড়কে চলাচলে বিঘ্নসৃষ্টি হয়েছে। নি¤œ আয়ের মানুষদের সাথে কথা বলে জানা যায়, বৃষ্টির কারণে বেশির ভাগ মানুষ কাজে বের হতে পারেননি। কাজে না যাওয়ার ফলে অনেকে অলস সময় কাটাচ্ছেন। বৃষ্টির কারণে বিশেষ করে রিকশা ও ভ্যান চালক, দিনমজুররা বেশি বিপাকে পড়েছেন।