বাঘারপাড়া সাবেক এমপি রণজিত কুমার রায়ের অবৈধ সম্পদের অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকে বেরিয়ে আসছে একের পর এক অভিযোগ। তিনি নানা পন্থায় অবৈধভাবে শুধু অর্থ আয় করতেন না, হিন্দুদের জমি দখল করা, টাকা না দিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি লিখে নিয়ে এক সময় তাদের কৌশলে ভারতে পাঠিয়ে দিতেন। বাঘারপাড়ায় এমন অভিযোগ রয়েছে বেশ কয়েকটি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, রনজিত কুমার রায় ২০০৮ সালে এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি গড়ে
তোলেন একটি সিন্ডিকেট। যে সিন্ডিকেটের কাজ ছিলো হিন্দু সম্প্রদায়ের কারা ভারতে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছে, তাদের চিহ্নিত করা। এরপর রণজিত রায় নিজেই সহজ সরল ব্যক্তি বাছাই করে সেখানে বিভিন্ন প্রলোভনের জাল বিস্তার করতেন। একসময় সর্বশান্ত করে পরিবারের সকলকে ভারতে পাঠিয়ে দিতেন। তেমনি এক ব্যক্তির নাম স্বপন কুমার ভট্টাচার্য।
বাঘারপাড়ার বাসুয়াড়ি গ্রামের স্বপন কুমার ভট্টাচার্য এলাকায় পূণ্য ঠাকুর নামে পরিচিত। নিজের জায়গাজমিতে কাজ পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন পূজায় ঠাকুরের দায়িত্ব পালনসহ বিয়েও পড়াতেন। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, পূণ্য ঠাকুরের চাচা কালিপদ ভট্টাচার্যের কোনো সন্তান ছিলো না। ছোট বেলা থেকে পূণ্য ঠাকুরকে লালন-পালন করেন তার চাচা কালিপদ। সে কারণে পূণ্য ঠাকুর চাচা কালিপদ ও চাচির মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেবা করেছেন। বিনিময়ে চাচা ও চাচি মিলে তিন একর ১৫ শতক জমি লিখে দেন পূণ্য ঠাকুরের নামে। এ জমি ছাড়াও কালিপদ ভট্টাচার্যের বাকি জমিও ভোগ করতেন পূণ্য ঠাকুর।
পূণ্য ঠাকুরের তিন ছেলের মধ্যে সুদেব ও সন্টু ভারতে বসবাস করতেন। অপর ছেলে গৌরঙ্গ যশোর শহরের চুড়িপট্টিতে একটি হার্ডওয়ারের দোকানে কাজ করতেন। ২০০৭ সালের শেষ দিকে পূণ্য ঠাকুর সিদ্ধান্ত নেন স্ত্রী ও ছেলে গৌরঙ্গকে নিয়ে ভারতে চলে যাবেন। এক সময় জায়গা জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়। সাইটখালি গ্রামের আব্দুল গফফার ৩ একর ১৫ শতক জমি ক্রয় করার জন্য পূণ্য ঠাকুরকে পাঁচ লাখ টাকা বায়না দেন। বাকি টাকা দলিল করার সময় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ২০০৮ সালের মাঝামাঝি আব্দুল গফ্ফার জমি দখলে নিয়ে চাষ শুরু করেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর জাতীয় নির্বাচনে প্রথমবারের মত রণজিত কুমার রায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর তার সিন্ডিকেটের সহায়তায় লোলুপ দৃষ্টি ফেলেন পূণ্য ঠাকুরের উপর। বিভিন্ন কৌশলে পূণ্য ঠাকুরকে বশে আনার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন রণজিত। ২০০৯ সালের মাঝামাঝি বাসুয়াড়ি গ্রামের অরুণ, গৌতম, দেব্রত, লিটন ও সিদ্ধেশ্বর মাস্টার জোর করে পূণ্য ঠাকুর ও তার স্ত্রীকে রণজিৎ রায়ের যশোরের খালধার রোডের বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে বসেই সাবরেজিস্ট্রার দিয়ে ভিটে বাড়িসহ ২ একর ১৫ শতক জমি লিখে নেন। একই দিনে রণজিত কুমার রায়ের ঘনিষ্টজন হিসেবে পরিচিত জামদিয়া ইউনিয়নের ভিটেবল্যা গ্রামের রেজাউল ইসলামও নিজের নামে এক একর মাঠের জমি লিখে নেন। রণজিৎ কুমার রায় শুধু লিখে নেওয়া জমি দখল নেননি, পূণ্য ঠাকুরের পৈত্রিক সম্পত্তিসহ চাচা কালিপদ ভট্টাচার্যের বাকি জমিও দখল নেন। যার পরিমান দেড় একর। একটি সূত্র জানিয়েছে, পূণ্য ঠাকুর টাকার জন্য বহুবার রণজিৎ রায়ের কাছে ধর্না দিয়েও কোনো টাকা পাননি। এক সময় কৌশল করে পূণ্য ঠাকুর ও তার ছেলে গৌরঙ্গকে ভারতে পাঠিয়ে দেন। রণজিত রায়ের সাথে এ সব কিছুর মূল নেতৃত্বে ছিলেন সিদ্ধেশ্বর মাস্টার। আব্দুল গফ্ফার জানিয়েছেন, পূণ্য ঠাকুর আমার কাছে জমি বিক্রির পর আমি জমি চাষ শুরু করি। প্রায় দুই একর জমিতে আমি সরিষা বপন করেছিলাম। রণজিত রায় তার বাহিনী দিয়ে আমার চাষ করা ফসল নেওয়ার চেষ্টা করে। সরিষা উত্তোলনের পর আমাকে আর ওই জমিতে যেতে দেওয়া হয়নি। তবে পূণ্য ঠাকুর ভারতে যাওয়ার পর আমার সাথে বেশ কয়েকবার ফোনে কথা বলেছে। আমাকে জানিয়েছে সে পরিস্থিতির শিকার। সুযোগমত আমার টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাস দেয় পূণ্য ঠাকুর। এ সব ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে পূণ্য ঠাকুরের ভাইপো সুকান্ত ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, বছর দেড়েক আগে ভারতে পূণ্য ঠাকুরের মৃত্যু হয়েছে। তার সব জায়গা জমি এখনও রণজিত রায়ের ভোগ-দখলে রয়েছে। বাসুয়াড়ির কালিপদ দে’র ছেলে কেশব দে সেসব জায়গা জমি দেখাশোনা করে।
@copy – Dainikkallyan