বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল বলেছেন, ‘এই সরকার নিজেদের ক্ষমতাকে স্থায়ী করার জন্য রন্ধ্রে রন্ধ্রে সমাজকে এত বেশি কলুষিত করেছে যে, হাজার হাজার বালতি গরুর দুধ ঢেলেও এটা পবিত্র করা অসম্ভব।’
তিনি বলেছেন, ‘আপনারা পত্রিকায় দেখেছেন, নওগাঁয় আওয়ামী লীগের এক গ্রুপের পতন হয়েছে, আরেক গ্রুপের হাতে ক্ষমতা এসেছে। তারা যখন ওই আওয়ামী লীগ অফিসে ঢুকল ৪৯ বালতি দুধ দিয়ে ধুয়ে তা পবিত্র করেছে। যারা নিজেরা জানে তারা অপবিত্র, সমাজকে মুক্ত করতে হলে তাদেরকে দূর করতে হবে। বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ ও স্বাধীনতার স্বপ্নের সঙ্গে মিল রেখে মানবিক মর্যাদা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই লড়াইকে সামগ্রিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে জিয়া পরিষদ আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। প্রফেসর আব্দুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন- বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়।
‘ধর্ষণের বিচার মৃত্যুদণ্ড করা এটা একটা ভাওতাবাজি’ উল্লেখ করে আলাল বলেন, ‘একজন আইনজীবী হিসেবে বলি, নারী ও শিশু নির্যাতন নিয়ে এই সরকার যে আইন পাস করেছে সে আইনের ৩৪ ধারার ১২টিতে মৃত্যুদণ্ড আগে থেকেই ছিল। সেখানে মানবপাচার আইন ও এসিড নিক্ষেপ আইনের ধারা চলে গেছে। বাকি থাকে ৭টি। সেই ৭টি ধারার সঙ্গে নতুন একটি ধারা মৃত্যুদণ্ড যুক্ত করে গোবর গলাচ্ছে। আর নিজেরা নিজেরা হাততালি দিচ্ছে। অথচ নতুন মৃত্যুদণ্ডের বিধান নিয়ে ওই আইনে ৮টি মৃত্যুদণ্ডের বিধান হয়েছে। একটি জাতির সঙ্গে আর কত প্রতারণা করা যায়? এরমধ্যে টাকা দিয়ে ভিপি নুরের দলকে যেভাবে ভেঙে দিচ্ছে সেরকম ভেঙে দেয়া হবে। টাকা, সুবিধা দিয়ে তাদেরকে বায়াজড করা হবে- কারণ এখনও তো ওই ধরনের লোক পাওয়া যায়।’
বিএনপির এ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ‘একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর তিনি কীভাবে দিনের পর দিন মিডিয়াতে প্রকাশ্যে বলেন- আমার এই পট্টি নিয়ে আমাকে যুবলীগের চেয়ারম্যান বানালে আমি খুশি।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘একজন ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর তার সঙ্গে দেখা করে এসে উপাচার্য সাংবাদিকদের বলেন, ওর জীবনে একটা অভিজ্ঞতা হয়েছে, তখন কী ইচ্ছে করে বলেন? শিক্ষকদের প্রতি পরিপূর্ণ শ্রদ্ধা রেখে বলছি, তখন ইচ্ছে করে ঘরের বারান্দায় বা বাইরের ডাস্টবিনে কোথাও পুরনো ময়লাযুক্ত চপ্পল আছে কি না। এর বেশি আমি আর কিছু বললাম না।’
রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘১২ মাসের ১১ মাসই ঢাকায় থাকেন। সেখানে যে বাংলো সেখানে তিনি থাকেন না, অন্য এক জায়গায় থাকেন। আর সেই তালাবদ্ধ বাংলো এবং যেখানে থাকেন উভয় জায়গার ভাড়া তিনি নেন।’
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির সমালোচনা করে আলাল বলেন, ‘কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ঢুকলেই দেখবেন, লেখা আছে রাজনৈতিক মুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। কিন্তু যুবলীগের ১৯ নম্বর প্রেসিডিয়াম সদস্য হলেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি। এরপর টেন্ডারের দরকষাকষি নিয়ে ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে মোবাইলের অডিও রেকর্ড বের হলো সেই ভিসির এখন পর্যন্ত কোনো কিছু হলো না।’
আলাল বলেন, ‘১০ টাকার একটি ভাওতাবাজি এই সরকার শুরু থেকেই করছে। আপনারা লক্ষ্য করবেন- কেউ ১০ টাকার চাল পায়নি। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, আওয়ামী লীগের লোকেরা ছাড়া কেউ পায়নি। তারপর বলল, ১০ টাকায় কৃষকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হবে, অ্যাকাউন্ট হয়েছে কি না- গ্রামে নিয়ে গিয়ে খোঁজখবর নিয়ে দেখুন। মোটকথা, যেখান থেকে আলো আসার কথা সেখান থেকেই অন্ধকার আসছে। সেই অন্ধকারকে প্রতিরোধ করে যদি আলো না যায় তাহলে আওয়ামী লীগ পালিয়ে যেতে বাধ্য হবে। সুতরাং আমরা শুধু রাজনৈতিক দিকগুলোর দিকে নয়, সামগ্রিক দিকে দৃষ্টিপাত করি।’
তিনি বলেন, ‘সময়টা এমন না যে ৬৯, ৯০-এর মতো একটা আন্দোলন হলো, আর আওয়ামী লীগ ক্ষমতা থেকে চলে গেল। এই সরকারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার জন্য পরিকল্পিতভাবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটি বদ্ধ আন্দোলন করতে হবে।’