বিভিন্ন উৎস থেকে ঋণ নিয়ে দেশের গ্রামীণ এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (বিআরইবি)। এর মধ্যে বিদেশী ঋণের পরিমাণই সবচেয়ে বেশি। প্রতি বছর তাই সংস্থাটির মোট ব্যয়ের বড় অংশই যায় ঋণ ও সুদ পরিশোধে। এবার এ খাতে আরো বেশি অর্থ ব্যয় হবে। বিআরইবির সংশোধিত বাজেট অনুসারে চলতি অর্থবছরে (২০২৩-২৪) ঋণের সুদ পরিশোধে খরচ হবে সংস্থাটির মোট ব্যয়ের ২০ শতাংশ। মূলত গ্রেস পিরিয়ড শেষ হওয়ার পাশাপাশি আগের বছরের দায় সমন্বয়ের কারণে এবার সুদ বাবদ বেশি অর্থ ব্যয় হবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির কর্মকর্তারা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সম্প্রতি বিআরইবির চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট চূড়ান্ত করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সুদ বাবদ সংস্থাটির ব্যয় হবে ১৮৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা। চলতি অর্থবছরের অনুমোদিত বাজেটে অবশ্য তা ছিল ১২২ কোটি ৪২ লাখ টাকা। সংশোধিত বাজেট অনুসারে চলতি অর্থবছরে ৩৭৮ কোটি ১০ লাখ টাকার ঋণ পরিশোধ করবে বিআরইবি, যেখানে অনুমোদিত বাজেটে এর পরিমাণ ছিল ৩৭৬ কোটি ৯০ লাখ টাকা।
চলতি অর্থবছরের অনুমোদিত বাজেটে বিআরইবির মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৫৬৪ কোটি ২৪ লাখ টাকা। এর ২১ দশমিক ৭০ শতাংশ অর্থ সুদ বাবদ ব্যয় হবে বলে সে সময় প্রাক্কলন করা হয়েছিল। যদিও সংশোধিত বাজেটে সংস্থাটির মোট ব্যয়ের ২০ দশমিক ২৪ শতাংশ সুদ বাবদ ব্যয় হবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৯০৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা।
জানতে চাইলে বিআরইবির নিয়ন্ত্রক (অর্থ ও হিসাব) মো. হোসেন পাটোয়ারী বণিক বার্তাকে বলেন, ‘অর্থবছর শুরুর আগে যখন বাজেট করা হয়েছিল তখন কী পরিমাণ ঋণ শোধ করতে হবে সে অনুসারে সুদ ব্যয় হিসাব করা হয়েছিল। এরই মধ্যে আমাদের বেশকিছু প্রকল্পের ঋণের গ্রেস পিরিয়ড শেষ হয়েছে। ফলে এর সঙ্গে সেগুলোর সুদ ব্যয়ও যোগ হয়েছে। এতে সংশোধিত বাজেটে বাড়তি এ সুদও যোগ হয়েছে। তাছাড়া এর সঙ্গে গত বছরের সুদ বাবদ কিছু দায়ও রয়েছে। এ কারণে গতবারের তুলনায় চলতি অর্থবছরে সুদ বাবদ ব্যয় বাড়বে। তবে এটি চূড়ান্ত হিসাব নয়, অর্থবছর শেষে এর পরিমাণ কমতে পারে কিংবা বাড়তেও পারে।’
বিআরইবির আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংস্থাটি ৩৭৬ কোটি ৯০ লাখ টাকার ঋণ ও ১২০ কোটি টাকার ৯৫ লাখ টাকার সুদ পরিশোধ করেছে। এর আগের অর্থবছরে পরিশোধ করা হয়েছে ২৩২ কোটি ৭৫ লাখ টাকার ঋণ ও ১২৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকার সুদ। ২০২০-২১ অর্থবছরে ২৩৫ কোটি ২১ লাখ টাকার ঋণ ও ১৪০ কোটি ৭৩ লাখ টাকার সুদ পরিশোধ করেছে বিআরইবি। তারও আগের অর্থবছরে সংস্থাটি ৩২১ কোটি ৮১ লাখ টাকার ঋণ ও ১০২ কোটি ৩৩ লাখ টাকার সুদ পরিশোধ করেছিল।
চলতি অর্থবছরে সুদ ব্যয় ছাড়াও অফিস খরচ, কর্মচারীদের বেতন-ভাতা ও সুযোগ-সুবিধাদি খাতে খরচ হবে বিআরইবির মোট ব্যয়ের সিংহভাগ অর্থ। এর মধ্যে অফিস খরচ বাবদ ৪৬ দশমিক ৯১ শতাংশ, বেতন-ভাতাদি বাবদ ১৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং কর্মচারীদের কল্যাণ ও সুযোগ-সুবিধাদি বাবদ ১০ দশমিক ৮৮ শতাংশ অর্থ ব্যয় হবে।
চলতি অর্থবছরের অনুমোদিত বাজেটে বিআরইবি ৯০৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার ঋণ পাবে বলে প্রাক্কলন করা হয়েছিল। সংশোধিত বাজেটে এর পরিমাণ বেড়ে ১ হাজার ৫২০ কোটি ৫১ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। গত বছরের ৩০ জুন শেষে সংস্থাটির মোট দীর্ঘমেয়াদি ঋণের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ৪৯৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদেশী ঋণ ছিল ১১ হাজার ৩৫ কোটি টাকার। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিআরইবির মোট আয় হয়েছে ১ হাজার ৭০৪ কোটি টাকা। যেখানে আগের অর্থবছরে আয় হয়েছিল ৮৪৩ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সংস্থাটির ৯৮৭ কোটি ৮৩ লাখ টাকা কর-পরবর্তী নিট মুনাফা হয়েছে, যা আগের অর্থবছরে ছিল ১৯২ কোটি ৮৮ লাখ টাকা।
চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বিআরইবির সাতটি প্রকল্পে ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। অবশ্য সংশোধিত এডিপিতে এর পরিমাণ কমে ১ হাজার ৭৮২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে সরকার ১০৮ কোটি, প্রকল্প সাহায্য ১ হাজার ১৫৪ কোটি ও সংস্থার অর্থের পরিমাণ ৫১৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে (জুলাই-মার্চ) এসব প্রকল্পে ৮২০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এ সময়ে প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতির হার ছিল ৪৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ।
বিআরইবির অধীনে বর্তমানে মোট ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি রয়েছে। এর অনুমোদিত প্রকল্পের সংখ্যা ৮৪। সংস্থাটির অন্তর্ভুক্ত জেলা ৬১টি। বর্তমানে বিআরইবির গ্রাহকসংখ্যা ৩ কোটি ৫৭ লাখ ৭৩ হাজার ৭৫৪। সংস্থাটির সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা ছিল গত ৭ এপ্রিল ৯ হাজার ৮১১ মেগাওয়াট। এদিন দেশের মোট জাতীয় উৎপাদনের ৫৮ শতাংশ বিদ্যুৎ পেয়েছে বিআরইবি। এর সিস্টেম লসের পরিমাণ ৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ।