1. live@www.chitrarpar.com : news online : news online
  2. info@www.chitrarpar.com : চিত্রারপাড় :
বৃহস্পতিবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৭ পূর্বাহ্ন

৬ আগস্ট হামলা করে নিলেন আরও একটি চার ফ্ল্যাট পেয়ে বাড়ি দখলে নামে তিন পুলিশ সদস্য

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: মঙ্গলবার, ৮ অক্টোবর, ২০২৪
  • ১৮ বার পড়া হয়েছে

বাড়ি দখলে সহযোগিতা করে আগেই নিয়েছেন চারটি ফ্ল্যাট। এবার গত ৬ আগস্ট ছাত্র-জনতার বিপ্লবের অস্থির সময়ে আরও একটি ফ্ল্যাট পাওয়ার লোভে ভবন দখলে সহযোগিতা করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। শুধু দখলে সহযোগিতাই নয়, জমির প্রকৃত মালিক ও ডেভেলপারের বিরুদ্ধেও ডজনখানেক মামলা দিয়ে হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি রাজধানীর ভাটারা থানাধীন জোয়ারসাহারা এলাকায়। অভিযুক্তরা হলেন—সোহরাব হোসেন, নুরুল হুদা ও জুলফিকার আলী। এর মধ্যে সোহরাব হোসেন পুলিশ পরিদর্শক হিসেবে ট্যুরিস্ট পুলিশের সদর দপ্তরের এমটি (মোটর) শাখায়, নুরুল হুদা পুলিশ সদর দপ্তরের পারসোনাল ম্যানেজমেন্ট-২-এর শৃঙ্খলা বিভাগে এবং পরিদর্শক জুলফিকার আলী পুলিশের বিশেষ শাখায় (এসবি) কর্মরত আছেন।

অ্যাডভান্স হোমস নামে একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তৌহিদা সুলতানা গত ২৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, ‘গত ৬ আগস্ট রাতে ভাড়া করা প্রায় দুইশজন লোক নিয়ে ক-৩১/৬/সি, হিমবাড়ি, জোয়ারসাহারা এলাকায় পুলিশের তিন কর্মকর্তার সহায়তায় অ্যাডভান্স হোমসের তৈরি করা ‘অ্যাডভান্স প্যারাডাইস’ নামক ভবনটি দখল করেন কামরুজ্জামান সেলিম। ওই সময় কামরুজ্জামান সেলিম, মফিজুর রহমান মফিজ, হাবিবুর রহমান, নূরুল হুদা, জুলফিকার আলী, আশফাক-ই-জামান, মিনহাজুল আবেদীন, মাহদী লিটন পূর্বশত্রুতার জের ধরে তার বাড়িতে গিয়ে প্রাণনাশের হুমকি দেন। তৌহিদাকে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়ে বাগবিতণ্ডায় জড়ায়। তৌহিদার অফিসে গিয়ে তাকে হয়রানি করে।’

তৌহিদা সুলতানার অভিযোগে দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে পুলিশ কর্মকর্তা সোহরাব, নুরুল হুদা ও জুলফিকারের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় স্থানীয় একটি পরিবারের ৩২ কাঠারও বেশি জমি দখল করে কামরুজ্জামান সেলিম, মো. মফিজ এবং মো. হাবিবসহ কয়েকজন। গত ৬ আগস্ট অ্যাডভান্স প্যারাডাইস ম্যানেজার তাকিউদ্দিন খান এবং সুপারভাইজার সামিনুলকে মারধর করে এক কাপড়ে বের করে দেওয়া হয়। বাড়ি দখলে সহযোগিতা করায় তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে আগেই চারটি ফ্ল্যাট দিয়েছিলেন সেলিম। ৬ আগস্টের পর তাদের আরও একটি ফ্ল্যাট দিয়েছেন সেলিম। ৬ আগস্ট রাতের ভয়াবহ নির্যাতনের বিবরণ দিয়ে তাকিউদ্দিন জানান, সোহরাব হোসেনের নেতৃত্বে একদল দুর্বৃত্ত বাড়িটিতে অতর্কিত হামলা করে। তাকে বেধড়ক মারধর করে। এমনকি তার দুই সন্তানকেও মারধর করা হয়। তাকিউদ্দিনের পরিবারের চারজনকে এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে। তিনি আরও বলেন, ‘আমি অ্যাডভান্স হোমসে চাকরি করি; এটাই আমার অপরাধ! আমার ছোট বাচ্চাকে ধরে আছাড় মেরেছে। জীবন বাঁচাতে ছোট ছোট সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে রাতের আঁধারে বের হয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি।’

কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার ১৬ বছরের গোছানো সংসার। রক্ত পানি করে সংসারের প্রতিটি জিনিস কিনেছি। তারা ট্রাক ভরে আমার বাসার সব আসবাপত্র এবং মোটরসাইকেল নিয়ে গেছে। এখন আমি ছেড়া প্যান্ট পরে ঘুরি। বাচ্চাদের কোনো কাপড় নেই। সংসারে থাকা আসবাবপত্রের শোকে আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে গেছে। তাকে তিনবার হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে। ভাড়াটে সন্ত্রাসী দিয়ে তিন পুলিশ ও তাদের সহযোগী মফিজ, হাবিব ও সেলিম খান আমাকে মারধর করে। আমরা বের হয়ে আসার সময় দেখি সেলিম ও তিন পুলিশ সন্ত্রাসীদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, ২০০৮ সালে ভাটারা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ছিলেন সোহরাব ও জুলফিকার আলী। সেই সময়ে তারা সেলিমকে স্থানীয় সুরত খানের পৈতৃক জমি দখলে সহযোগিতা করেন। সুরত খানের পাঁচ ছেলে ও তিন মেয়ে। ছেলেরা হলেন- মৃত আজিজুল্লাহ খান, মৃত আমানুল্লাহ খান ও ছাবিত উল্লাহ খান, নাসির উদ্দিন খান, বশির উদ্দিন খান ও মেয়েরা- মৃত রাহিমা খাতুন, মুসলিমা খাতুন ও রহিমা খাতুন। এই পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও ভয়ভীতি দেখাতে থাকেন তৎকালীন দুই এসআই। এই সুযোগে সুরত খানের সন্তানদের জমি দখলে নেন সেলিম, মফিজ, হাবিবসহ কয়েকজন। পরে নিজের নামে ভুয়া দলিল করে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন। জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে তৈরি করা কাগজে দাখিল করে ২০১০ সালে অ্যাডভান্স হোমসের সঙ্গে ৯ তলা ভবন নির্মাণের চুক্তি করেন সেলিম। ভবন নির্মাণ শেষে ২০১৪ সালে অ্যাডভান্স হোমসের মালিক তৌহিদা সুলতানা ফ্ল্যাট বিক্রি করতে গিয়ে দেখেন তার সঙ্গে চুক্তি করা সেলিম গংরা জমির প্রকৃত মালিক নয়। বরং তারা জাল কাগজপত্র বানিয়ে মালিক সেজে ভবন নির্মাণচুক্তি করেন। এমন কি ২০১৫ সালে কামরুজ্জামান সেলিম অ্যাডভান্স হোমসের প্রাপ্ত হিস্যার ফ্ল্যাটও জাল দলিল করে বিক্রি করে দিয়েছেন। ভুয়া দলিলপত্র তৈরিতে অসাধু আইনজীবীদের একটি চক্র সহযোগিতা করেন। নিরুপায় তৌহিদা ব্যবসায়িক লোকসান ঠেকাতে ২০১৮ সালে প্রকৃত মালিক পক্ষের কাছ থেকে জমি কিনে নেন। ভবনটি তার দখলে থাকলেও সেলিম গংরা অবৈধভাবে পরিবার নিয়ে বসবাস করে আসছিলেন। ২০১৪ সাল থেকে পুলিশ কর্মকর্তা সোহরাব ২টি ফ্ল্যাট ও জুলফিকার ১টি ফ্ল্যাটে থাকত। আর নুরুল হুদা একটি ফ্ল্যাট দখলে রেখে ভাড়া দিয়ে রেখেছিলেন।

অ্যাডভান্স হোমসের ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) বলেন ‘২০২০ সালে নুরুল হুদা রাতের আঁধারে নবম তলার একটি ফ্ল্যাটের তালা বদল করে তার ভাগনাকে দিয়ে দখল করে। পরে ভাটারা থানা পুলিশের সহযোগিতায় সেই ফ্ল্যাটটি দখলমুক্ত করা হয়। তারা কোনো ধরনের মালিকানা ছাড়া শুধু পুলিশ পরিচয় ব্যবহার করে চারটি ফ্ল্যাট দখল করে রেখেছে।

মামলা-হামলা ও হয়রানির বিষয়ে সুরত খানের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা ভয়ে মুখ খুলতে রাজি হয়নি। তারা জানান, সেলিম ও তার সহযোগী পুলিশের তিন পরিদর্শক পরিবারটির কাছে একটি আতঙ্কের নাম। সেলিম চক্রের অত্যাচার তাদের জীবন অতিষ্ঠ করে তুলেছে। জিআর ও সিআর মামলা মিলিয়ে সেলিম এই পরিবারের সদস্যদের নামে ১৩টি মামলা দিয়েছে। সব মামলায় পক্ষে রায় গেলেও তারা রেহাই পাচ্ছেন না। একটা মামলা শেষ হলে আরেকটা মামলা দেয়।

তারা আরও বলেন, ২০১০ সালে আমাদের মামলার মধ্যে রেখে অ্যাডভান্স হোমসের কাছে জমি দেন ভবন নির্মাণের জন্য। কিন্তু ভবন নির্মাণ শেষে মালিক জানতে পারেন জমি সেলিমের নয়। পরে তারা আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন জমিটি কেনার জন্য। যেহেতু তৌহিদা সুলতানা আগেই জমিতে ভবন নির্মাণ করেছেন; তাই আমরা মানবিক দিক বিবেচনা করে তার কাছে জমি বিক্রি করি। এই জমি বিক্রি করায় ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় একটি মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়। রাতের আঁধারে অভিযান চালিয়ে পুলিশ আমাদের পরিবারের চারজনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায়। তারা দীর্ঘদিন জেল খেটে জামিনে মুক্তি পান। পরবর্তী সময়ে মামলাটি সিআইডি তদন্ত করে মিথ্যা মামলার প্রমাণ পায় এবং সেলিমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদন দেয়।

সেলিমের প্রতারণা পুলিশ চক্রের বিষয়ে তৌহিদা সুলতানা বলেন, ‘আমি একজন নারী হয়েও ডেভেলপার ব্যবসায় এসেছি এবং সফলতার সঙ্গে ব্যবসা করছি। কিন্তু সেলিম চক্রের প্রতারণা ও তিন পুলিশের ক্ষমতার দাপটে আজ আমি পথে বসে গেছি। ২০১০ সালে জাল কাগজ দিয়ে ডিড অব অ্যাগ্রিমেন্ট ও অপ্রত্যাহারযোগ্য আমমোক্তারনামা করে। পরে আবার ২০১৮ সালে প্রকৃত মালিকের কাছ থেকে জমিটি কিনে নিতে হয়। বিষয়টি ছিল আমার জন্য অনেক বড় আর্থিক ক্ষতি। এরপর সেলিম থেমে থাকেনি। বরং নিজেকে জমির মালিক দাবি করে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে যাচ্ছে। ফলে ফ্ল্যাটগুলো বিক্রি করতে পারছি না। বারবার মামলায় জিতে আসার পরও আমি ফ্ল্যাট বিক্রি করতে না পারায় বিশাল অঙ্কের ক্ষতির মুখে আছি।

সেলিম ও তিন পুলিশের ক্ষমতার অপব্যবহার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জোয়ারসাহারা এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা গুলশান থানা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আবু নাসের শামীম কালবেলাকে বলেন, সেলিম জালিয়াত চক্রের সদস্য। তার কাজই হচ্ছে অন্যের জমি জবরদখল করা। অ্যাডভান্স হোমসের সঙ্গেও সে প্রতারণা করেছে। আমি ঠিক পাশের বিল্ডিংয়ে থাকার কারণে জমির সব কাগজ আমার কাছেও আছে। ক্রয়সূত্রে জমিটির মালিক তৌহিদা সুলতানা। তিনি আরও বলেন, ৬ আগস্ট সন্ধ্যার দিকে আমি এলাকার বাইরে ছিলাম। আমার স্ত্রী আমাকে ফোন দিয়ে জানায়, পাশের ভবনে হামলা হয়েছে। এরপর এলাকায় এসে জানতে পারি সোহরাব এবং জুলফিকারের সহায়তায় সেলিম ওইদিন হামলা করে। আমি বিষয়টির প্রতিবাদ করায় আমাকেও হুমকি দিয়েছে এবং আবার পুলিশ কর্মকর্তা জুলফিকার আমার ছবি তুলে রেখেছে এবং আমাকে দেখে নেবে বলেছে।

অভিযোগের বিষয়ে কামরুজ্জামান সেলিম বলেন, আমি এই জোয়ারসাহারা এলাকায় স্থানীয় বাসিন্দা। আমি দীর্ঘদিন ধরে এই জমির মালিক। আমার কাগজপত্র সব ঠিক আছে। সিআইডি আমার বিরুদ্ধে যে রিপোর্ট দিয়েছিল, সেটি ভুয়া। এ ছাড়া ৬ তারিখ আমি ওই ভবনে কোনো হামলা চালাইনি। সিআইডির তদন্ত রিপোর্ট যে ভুয়া; সেই প্রমাণ আপনার কাছে আছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘পুলিশ সবসময় টাকা খেয়েই রিপোর্ট দেয়। ওসব আমার জানা আছে।’

ফ্ল্যাট নিয়ে অবৈধভাবে ভবন দখলে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ পরিদর্শক সোহরাব হোসেন দাবি করেন, আমি ওইদিন হামলার সময় ভবনে উপস্থিত ছিলাম না। আমি এখানে একটি ফ্ল্যাট কিনে বসবাস করছি। এর বাইরে কিছু জানি না।’

অন্য দুই পুলিশ কর্মকর্তা নুরুল হুদা ও জুলফিকার আলীর বক্তব্য জানার জন্য দফায় দফায় ফোন করা হলেও তারা রিসিভ করেননি। খুদেবার্তা পাঠালেও রিপ্লাই দেননি। বক্তব্য জানার জন্য তাদের জোয়ারসাহারার বাসায় গেলে ভেতরে প্রবেশ করতে দেয়নি।’ কালবেলা

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০
১১১২১৩১৪১৫১৬১৭
১৮১৯২০২১২২২৩২৪
২৫২৬২৭২৮২৯৩০  
© সমস্ত অধিকার সংরক্ষিত
প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট