হবিগঞ্জ জেলার শায়েস্তাগঞ্জ সহ চার উপজেলার সীমানা ছুঁয়েছে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৮৬ কিলোমিটার এলাকা। ২০০৩ সালে মহাসড়ক নির্মাণের পর যাত্রীরা ঢাকায় যাতায়াতে স্বস্তি ফিরে পেয়েছিলেন। এতদিন সড়কটি ভালো থাকলেও এখন যাত্রীদের কাছে তা মহাদুর্ভোগে পরিণত হয়েছে। মহাসড়কে অসংখ্য খানাখন্দে ভরে আছেই, সঙ্গে অসহনীয় যানজট। অহরহ অঘটন ঘটছে এ মহাসড়কে। একের পর এক যাচ্ছে প্রাণ। সড়কটিতে দুর্ঘটনা এখন প্রতিদিনের সঙ্গী। সড়কে ঝরে যাচ্ছে শত শত প্রাণ। কারো বা যাচ্ছে হাত-পা। কেউ হয়ে যাচ্ছেন পুরো জীবনের জন্য পঙ্গু। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি এখন যেন গর্তের মহাসড়ক। ছোট-বড় গর্তের কারণে মহাসড়কটি যেন গোপাটে পরিণত হয়েছে। হবিগঞ্জ জেলায় রয়েছে ৮৫ কিলোমিটার মহাসড়ক। এর মধ্যে ৫০ কিলোমিটার সড়কের অবস্তা খুবই নাজুক। ঢাকা থেকে সিলেট অভিমুখে এ মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াতের সময় যন্ত্রণা শুরু হয় মাধবপুর পার হওয়ার পর থেকে। হবিগঞ্জ থেকে ঢাকা যাত্রা করলে যেখানে তিন থেকে সোয়া তিন ঘন্টা সময় লাগত। আর এখন সময় লাগে সাড়ে চার থেকে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা। কখনো কখনো আরও বেশি সময়। ভাঙা সড়কটিতে এখন যানজট নিত্যসঙ্গী। ভাঙাচুরার কারণে সড়কে দুর্ভোগের ব্যাপার যখনই আলোচনায় আসে, তখনই লোক-দেখানো কাজ করা হয়। সড়ক বিভাগের কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ফলে এসব কাজেরও কোনো স্থায়িত্ব থাকে না। কিছু দিন পর ফের দেখা দেয় ভাঙন। বিভিন্ন সূত্র জানায়, গত কয়েক মাসে ভাঙা এ সড়কে অর্ধশত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক আগে মরণ ফাঁদ বলে পরিচিত ছিল। এখন মৃত্যুকূপ ও দুর্ভোগের মহাসড়ক বলে পরিচিতি পেয়েছে। মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জ, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলার সীমানা শেরপুর পর্যন্ত মহাসড়কের স্থানে স্থানে ছোট-বড় গর্ত সৃষ্টি হওয়ায় যানবাহন চলছে ঝুঁকি নিয়ে। এসব গর্ত জোড়াতালি দিয়ে মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হয়। চলতি বৎসর ২৩ আগস্ট বাহুবল উপজেলার ডুবাঐ বাজার এলাকায় ট্রাক গর্তে পড়লে বিপরীত দিক থেকে আসা আরেকটি ট্রাকের সংঘর্ষ হয়। এতে চালক প্রাণ হারান। অন্যরা গুরুতর আহত হন। গত ১৪ আগস্ট হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ থানার নুরপুর নামক স্থানে ট্যাংকলারী তেলবাহী গাড়ি গর্তে পড়ে গাড়িতে আগুন ধরে যায়। আগুন নিভাতে গিয়ে তিন দমকল কর্মী আহত হন এবং তেলসহ গাড়ির ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। ওই দিন ভোরে অলিপুরে বিদেশ ফেরত যাত্রী নিয়ে মাইক্রোবাস খাদে পড়ে দুইজন নিহত ও ছয়জন আহত হন। এর দুই দিন পুর্বে শায়েস্তাগঞ্জ থানার অলিপুর রেলক্রসিংয়ের কাছে ট্রাক গর্তে পড়ে রেল ইঞ্জিন বিকল হলে রাস্তায় যানজট সৃষ্টি হয়। সরেজমিনে দেখা যায়, মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জ, বাহুবল ও নবীগঞ্জ উপজেলার শেরপুর সীমান্ত পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে কার্পেটিং উঠে গিয়ে বড় বড় গর্ত হয়েছে। এরমধ্যে অধিকাংশ ব্রীজের প্রবেশমুখে বড় বড় ভাঙন ধরেছে। অল্প বৃষ্টিতেই এসব গর্তে পানি জমাট হয়ে ভরে উঠছে। এতে কোনো কোনো স্থানে হচ্ছে জলাবদ্ধতা। ফলে সড়ক চেনা মুশকিল হয়ে পড়ে চালকদের। যাত্রীদের অভিযোগ, শায়েস্তাগঞ্জ নতুন ব্রীজ গোলচত্তর পয়েন্ট, অলিপুর রেলক্রসিং এলাকার অবস্থা আরও ভয়াবহ। খানাখন্দ আর যত্রতত্র গর্তে পুরো রাস্তা যেন মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আরও বিড়ম্বনা শুরু হয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিশ্বরোড পার হওয়ার পর। বিজয়নগর, মাধবপুর, শায়েস্তাগঞ্জ, বাহুবল, নবীগঞ্জ, মৌলভীবাজারের শেরপুর পেরিয়ে সিলেট পর্যন্ত সড়কের এমন বেহাল অবস্থা দীর্ঘদিনের। মহাসড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কার হয়নি। মহাসড়কের এমন করুণ রাস্তার মধ্য দিয়েই যাত্রী ও পণ্যবাহী যানবাহন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে প্রতিদিন। অপরদিকে, নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের সঈদপুর বাজার, দেবপাড়া ইউনিয়নের সদরঘাট নতুন বাজার থেকে শুুরু করে পানিউমদা বাজার পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়কের বিভিন্ন স্থানে অনেক বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে টানা বৃষ্টির পানি জমে গর্তগুলো ভরে উঠে। এ কারণেও মারাত্মক দুর্ঘটনাও ঘটছে প্রতিনিয়ত। শায়েস্তাগঞ্জ সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শামীম আল মামুন বলেন, ইতোমধ্যে মহাসড়কের ভাঙা স্থানগুলোতে সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে। তবে বৃষ্টির কারণে কাজে কিছুটা ব্যাঘাত হচ্ছে